চট্টগ্রাম সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

ছিনতাই জোন কোতোয়ালী!
বুধবার নগরীর টেরীবাজারে কিশোরীর গলার স্বর্ণের চেইন নিয়ে পালানোর সময় স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পড়ে এ ছিনতাইকারী

ছিনতাই জোন কোতোয়ালী!

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জুলাই, ২০২৫ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

নগরীতে যানবাহনে ছিনতাই বেড়েছে আশংকাজনকভাবে। প্রতিদিন নগরীর কোথাও না কোথাও ঘটছে বুধবার নগরীর টেরীবাজারে কিশোরীর গলার স্বর্ণের চেইন নিয়ে পালানোর সময় স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পড়ে এ ছিনতাইকারীয়ের ঘটনা। ঘটনার শিকার ব্যক্তি থানায় গেলে চুরির কথা বলে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিয়ে দায় সারে থানা পুলিশ। পরবর্তীতে ছিনতাইকারীকে আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে পুলিশের তেমন তৎপরতা দেখা যায় না। ছিনতাই মামলা নিতেও আগ্রহী নয় থানা পুলিশ।

 

নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার আলমগীর হোসেন জানান, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে যানবাহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে আমরা বৈঠক করেছি। বিগত রমজানে আমরা বেশ কিছু ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তারও করেছি। এদের অনেকে হয়তো জামিনে এসেছে। তারাই হয়তো ফের অপরাধে জড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।

 

কেস স্টাডি-১: গত বুধবার নগরীর টেরীবাজারে এক ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, সন্ধ্যা আনুমানিক পৌনে ছয়টার সময় এক মহিলা তার ১২ বছর বয়সী কিশোরীকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে এক যুবক কিশোরীর গলার স্বর্ণের চেইন টান দেয়। মা-মেয়ের চিৎকারে লোকজন ধাওয়া দিয়ে ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলে। এরমধ্যে চেইনটি মুখে নিয়ে গিলে ফেলে।

 

কেস স্টাডি-২: নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুজয় সেন জানান, গত ২২ জুলাই সকাল দশটায় তিনি নিউ মার্কেট থেকে নতুন ব্রিজ যেতে ১৭ নম্বর রোডের মাহিন্দ্রা গাড়িতে উঠেন। এ সময় গাড়িতে থাকা ছয় সাতজনের একদল যুবক তার হাতের মুঠোফোনটি টান দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। তিনিও গাড়ি থেকে নেমে ছিনতাইকারীদের পিছু ধাওয়া করেন। কিন্তু মুঠোফোনটি ফেরত পাননি। পরে কোতোয়ালী থানায় গেলে ছিনতাইয়ের বিষয়টি সাধারণ ডায়েরি হিসাবে লিপিবদ্ধ করে পুলিশ।

 

কেস স্টাডি-৩: শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, তার বড় বোন কয়দিন আগে এসেছে বিদেশ থেকে। গত ১৩ জুলাই একটি রিকশায় করে স্বামীসহ ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন। রিকশাটি জমিয়তুল ফালাহ এলাকায় পৌঁছাতেই পেছন দিক থেকে একটি সিএনজি ট্যাক্সি নিয়ে আসা ছিনতাইকারীরা তার বড় বোনের হাতে থাকা ব্যাগটি টান মেরে নিয়ে যায়। ব্যাগে বিদেশ যাবার সব ধরনের কাগজপত্র, একটি আইফোন-১৬ প্রো, চার ভরি স্বর্ণালংকার ও ১০ হাজার টাকা ছিল। থানায় গেলে বিষয়টি পুলিশ যথারীতি জিডি হিসাবে লিপিবদ্ধ করে। থানা থেকে বলা হয় মোবাইলটি পেতে সাত আট সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। যদি ভাগ্যে থাকে পেতেও পারেন। তবে অন্য কোন কাগজপত্র পাবেন না।

 

কেস স্টাডি-৪: জাকির হোসেন নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী জানান, গত ৬ জুলাই লালখান বাজার থেকে জিইসি মোড়ে যেতে দুই নম্বর বাসে উঠেন। উঠার সময় বাসটি মোটামুটি ফাঁকা ছিল। তিনি বাসে উঠার সাথে সাথে ৮/৯ জন ব্যক্তিও উঠেও। এরমধ্যে এক ব্যক্তি তার হাত থেকে ৩৫ হাজার টাকা দামের মুঠোফোনটি কেড়ে নিয়ে বাস থেকে নেমে যায়। ঘটনার পর পর বাসের হেলপার তাকে জোর করে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। বললেন, নেমে তাড়াতাড়ি চোর ধরেন।

 

জাকির বলেন, মুঠোফোনটি আমার অনেক দিনের জমানো টাকায় কেনা। অফিসিয়াল যোগাযোগ, জরুরি ফাইল সবকিছুই ওই ফোনের মধ্যে। এভাবে নগরীতে প্রতিনিয়তন ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। তবে নগরীর ষোল থানায় খুঁজলে পুরো মাসে নগরীর কোন থানায় মুঠোফোন ছিনতাইয়ের কোন মামলা পাওয়া যাবে না। কারণ মুঠোফোন ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ে কেউ থানায় গেলে পুলিশ ফোন হারানোর কথা বলে সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ করেন।

 

নগরীতে কি পরিমাণ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে তা সাম্প্রতিক একটি ঘটনায় বুঝা যায়। নগরীর কোতোয়ালী থানার নন্দনকানন হরিশদত্ত লেনের জনৈক সোহেলের বাসায় গত ১০ জুলাই রাতে অভিযান চালায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি ও ছিনতাই হওয়া ৩৪২টি মোবাইল ফোন, ছয়টি পুরাতন ল্যাপটপ ও দুই লক্ষ টাকা। প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত দিতে মুঠোফোনগুলোর আইইএমই নম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে। ৩৪২টি মুঠোফোন উদ্ধার হলেও হাজারো নারী পুরুষ তাদের মুঠোফোনের খুঁজে নগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে ভিড় করেন। যারা বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে মুঠোফোন হারিয়েছেন। যাদের কাছে ছিল মুঠোফোন হারানোর জিডির কপি।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট