
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। মারধরের শিকার ওয়াহিদুল আলম শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও সিএফসি গ্রুপের নেতা। তার বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীদের মারধর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাংবাদিককে মারধরে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স ফ্যাকাল্টির সামনের পুকুরপাড়ে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারধরের শিকার ওই ছাত্রলীগে নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সাইন্সের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ৯টার দিকে চলতি একটি বাইক থেকে ওই নেতাকে ফেলে দেওয়া হয়। পরক্ষণে ৪ থেকে ৫ জন মিলে তাকে মিনিট দেড়েক ধরে মারধর করা হয়। তবে যে জায়গাতে তাঁকে মারধর করা হয় ওই জায়গাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ায় কাউকে চেনা যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবী মিলে সায়েন্স ফ্যাকাল্টির রাস্তা দিয়ে হেটে আসার সময় হঠাৎ দেখি একটি বাইক থেকে একজনকে ফেলে দেওয়া হয়। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম এক্সিডেন্ট। কিন্তু পরবর্তীতে দেখি আরও কয়েকজন একত্রিত হয়ে ওই ফেলে যাওয়া লোকটাকে মারধর করছে। আমরা ভয়ে ওইদিক থেকে চলে আসি।
মারধরের শিকার ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন গ্রুপের মারামারিতে সিএফসি গ্রুপের হয়ে মারামারিতে নেতৃত্ব দিতেন তিনি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন উস্কানিমূলক পোস্ট দিতে দেখা গেছে তাকে।
তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, গত বছরের ১৪ জুলাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যখন সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিকে শাটল ট্রেনে হেনস্থা ও মারধর করে তুলে এনে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসে তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন এই ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুল আলম। ওইসময় শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের সাথে উগ্র আচরণ করেন এই নেতা।
এছাড়াও গতবছর ১৯ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক শাহরিয়াজ মোহাম্মদকে মারধরের সময়ও উপস্থিত ছিলেন এই ছাত্রলীগ নেতা।
এ বিষয়ে চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা হয়ে এত অপকর্ম করার পরেও কিভাবে ক্যাম্পাসে আসার সাহস পায়? আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ কী? তারা কি জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করে না? প্রক্টরিয়াল বডি তাকে ট্রিটমেন্ট দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। সে নির্দোষ নাকি অপরাধী তদন্ত করেছে কিছু?
এ বিষয়ে চবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, আগে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ করতো এরকম একটা ছেলেকে মারধর করা হয়েছে বলে শুনেছি।
এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন বলেন, চোর ধরার ঘটনা শুনে আমরা সায়েন্স ফ্যাকাল্টির দক্ষিণ পাশে যাই। সে (ছাত্রলীগ নেতা) নিজেও জানায় ‘ছাত্রলীগ’ ছিলাম বলে আমাকে মারধর করা হয়েছে। কিন্তু কারা মারধর করেছে সে নিজেও চিনতে পারেনি। পরে তাকে চবি মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার চমেকে রেফার করতে বলেন। তবে সে যেতে রাজী হয়নি। ওইসময় তার (ছাত্রলীগ নেতা) দুই বন্ধু এসে উপস্থিত হয়। পরবর্তীতে তাদের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পূর্বকোণ/জুনায়েদ/জেইউ