চট্টগ্রাম সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

ভুয়া ও মিথ্যা সনদ দিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি!
আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম

ভুয়া ও মিথ্যা সনদ দিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ জুলাই, ২০২৫ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

নগরীর আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া’ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ‘মিথ্যা’ অভিজ্ঞতার সনদ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম ফরহাদ। তবে উদ্দেশ্যকৃতভাবে এসব অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক।

 

অভিযোগের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে। গত ২ জুলাই বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মো. আবুল কাসেম স্বাক্ষরিত নোটিশে কমিটি গঠন এবং তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক হলেন সীতাকুণ্ড উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস. মোস্তফা আলম এবং পাহাড়তলীর ওয়ার্লেস ঝাউতলা কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নিজাম উদ্দিন ও হালিশহর গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে সদস্য করা হয়েছে।

 

শিক্ষা বোর্ডে করা অভিযোগে বলা হয়েছে, দীর্ঘসময় শিক্ষকতা করার জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ছাড়াই জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি নিয়ে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। যোগদানের সময় তিনি ২০০৬ সালে ইউজিসি কর্তৃক বন্ধ ঘোষিত ‘আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি’ থেকে এমএ (ইংরেজি) পাশের সনদ ব্যবহার করেন। এছাড়া, এমপিওভুক্তির জন্য ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন হলেও জাল অভিজ্ঞতা সনদ প্রদর্শন করে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

 

এর আগে, তিনি সীতাকুণ্ডে ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ মাস এবং পাহাড়তলী বালিকা বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর চাকরি করেছেন। একই সময়ে চান্দগাঁও থানার মোহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিযোগও রয়েছে।

 

এদিকে পাহাড়তলী বালিকা বিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় তিনি বিদ্যালয়ের সম্পত্তি ব্যবহার করে অবৈধ মার্কেট নির্মাণের মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী কাউন্সিলরকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বানিয়ে বিদ্যালয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষকদের হয়রানি, চাকরি থেকে বরখাস্তের হুমকি এবং আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

 

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ‘মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

 

আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম ফরহাদ বলেন, প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের তথ্য আমি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডকে লিখিতভাবে অভিযোগ আকারে জানিয়েছি। শুনেছি বোর্ড এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে তদন্ত কমিটি এখনো পর্যন্ত আমার কাছ থেকে কোন তথ্য চায়নি।

 

এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ২০১৯ সালে এই বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছি। বর্তমানে সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ অন্য একজন শিক্ষক উদ্দেশ্যকৃতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। আমাকে সরিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম ফরহাদ প্রধান শিক্ষক হবেন, হয়তো এই আশায় তিনি এসব করছেন।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট