চট্টগ্রাম সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

ছাদে খেলারত শিশু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি
ফাইল ছবি

চমেক হাসপাতালে বেড়েছে আইসিইউ শয্যা, নার্স সংকটে দুশ্চিন্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮ জুলাই, ২০২৫ | ১২:৪৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে আইসিইউ শয্যার জন্য হাহাকার দীর্ঘদিনের। সুখবর হলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সম্প্রতি চালু হয়েছে নতুন ৩০ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ড। ফলে মোট শয্যা দাঁড়াল ৬০। যা বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের রোগীদের জন্য স্বস্তির। তবে এই সক্ষমতা সময়োপযোগী হলেও আইসিইউ চালনার মূল চালিকাশক্তি নার্স ও সহায়ক কর্মীর সংকট কাটেনি। জনবল ঘাটতির কারণে কাঙ্খিত সেবার মান নিশ্চিত করাও চ্যালেঞ্জ।

শয্যা বৃদ্ধি প্রশংসনীয় হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী নার্স, মেডিকেল অফিসার ও সহায়ক কর্মী বাড়ানো জরুরি। তা না হলে শয্যা বাড়ানোর সুফল পুরোপুরি মিলবে না, বরং রোগীদের জন্য ঝুঁকি থেকেই যাবে।

জানা গেছে, সম্প্রতি চমেক হাসপাতালের চতুর্থ তলায় (ইউনিট-১) নতুন অবকাঠামো তৈরি করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ৩০ শয্যার আইসিইউ চালু হয়েছে। আগে এই ইউনিটে ১৮ শয্যা ছিল। এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হাসপাতালের নিচতলায় (ইউনিট-২) ৩০ শয্যার আরেকটি ইউনিট চালু হয়। ফলে চতুর্থ তলার পুরনো ১৮ শয্যা এখন ৩০-এ উন্নীত হয়েছে।

বর্তমানে চমেক হাসপাতালের ২,২০০ শয্যার মধ্যে আইসিইউ শয্যা ৬০। যেখানে রোগীর চাপ প্রতিদিন বাড়ছে। শয্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে কিছুটা চাপ সামলানো সম্ভব হলেও প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামো না থাকলে কাঙ্খিত সেবা মান বজায় রাখা কঠিন হবে, বলছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।

 

চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, শয্যা বাড়ানো হয়েছে, এতে রোগীরা সুযোগ পাচ্ছেন। তবে নার্স বাড়ানো জরুরি। কারণ আইসিইউতে রোগীর অবস্থা মুহূর্তে বদলে যেতে পারে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিতে বাড়তি জনবল দরকার। তথ্য অনুযায়ী, চমেক হাসপাতালের ৬০ আইসিইউ শয্যার জন্য কর্মরত আছেন ৬৭ জন নার্স, ৩২ জন মেডিকেল অফিসার ও ১০ জন কনসালটেন্ট। তবে বেশিরভাগ কনসালটেন্ট অস্ত্রোপচার কক্ষে কাজ করেন, আইসিইউতে সরাসরি নিয়োজিত নন।

 

নার্সদের তিন শিফটে কাজ করার কথা থাকলেও ছুটি ও অসুস্থতার কারণে প্রতিটি শিফটে নার্সের সংখ্যা কম থাকে। ওয়ার্ড বয় ও ক্লিনার আছেন মাত্র ১৪ জন, যাদের তিন শিফটে ভাগ হয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রোগী পরিবহনসহ সহায়ক কাজে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক ক্রিটিক্যাল কেয়ার সোসাইটির গাইডলাইন অনুসারে, প্রতি আইসিইউ শয্যার জন্য দিনে ১ জন নার্স থাকা উচিত। অর্থাৎ ৬০ শয্যার জন্য ২৪ ঘণ্টায় ১৮০ জন নার্স প্রয়োজন। অথচ চমেকে বর্তমানে আছেন মাত্র ৬৭ জন।

 

তাছাড়া, প্রতি ৪-৫ শয্যার জন্য ১ জন মেডিকেল অফিসার এবং প্রতি ৮-১০ শয্যার জন্য ১ জন কনসালটেন্ট থাকা গাইডলাইনে বলা হলেও, চমেকের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। তবে তাদের অনেকেই এনেস্থেসিয়া বিভাগে কর্মরত থাকায় আইসিইউতে সরাসরি দায়িত্ব পালন করেন না। ফলে জনবল ঘাটতির চাপ থেকেই যাচ্ছে।

 

আইসিইউতে দায়িত্ব পালন করা এক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন নার্সের ওপর একাধিক সংকটাপন্ন রোগীর দায়িত্ব থাকলে, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন। শয্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জনবল না বাড়ালে কাঙ্খিত সেবা দেওয়া কঠিন হবে।

 

হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, আমরা জনবল বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুতই ঘাটতি পূরণ হবে। পুরো হাসপাতালে নার্সসহ বিভিন্ন জনবলের সংকট রয়েছে। এ নিয়ে বহুবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।

 

১৯৬০ সালে মাত্র ১২০ শয্যা নিয়ে চমেক হাসপাতালের যাত্রা। তখন আইসিইউ ছিল মাত্র ৫টি। ২০০৫ সালে তা বাড়িয়ে করা হয় ১২। এরপর ২০১৩ সালে হাসপাতালের সাধারণ শয্যা বেড়ে ১,৩১৩ হলেও আইসিইউ শয্যা বাড়েনি। ২০২০ সালের অক্টোবরে ১৫ বছর পর তা ২০তে উন্নীত হয়। এরপর ২০২৪ সালে একসঙ্গে ৩০টি বেড়ে ৫০ শয্যা হয়। অবশেষে এক বছরের ব্যবধানে বর্তমানে ৬০টি আইসিইউ শয্যা চালু হয়েছে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট