সীতাকুণ্ডে ফলন বেশি হওয়ায় দরপতন
ন্যায্য মূল্য নেই, ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছেন না বহু কৃষক!
প্রচুর টাকা ক্ষতি কৃষকের, হিমাগার না থাকায় উপায় নেই সংরক্ষণের
সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী। সারাবছর নানারকম সবজির চাষ করেই দিনাতিপাত করেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে এবার সাড়ে তিন একর জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। এ জমিতে চাষাবাদে তার খরচ পড়েছে ১২ লাখ টাকা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তিনি টমেটো বিক্রি করেছেন মাত্র চার লাখ টাকার। এরই মধ্যে টমেটোর দাম কমেছে হুরহুর করে। অবস্থা এমনই যে মাঠ থেকে টমেটো তুলে বাজারে আনতে যে খরচ, বিক্রি করলে তাও উঠছে না। ফলে ক্ষেত থেকে টমেটো তুলতে আগ্রহ হারিয়েছেন তিনি। এতে বড় অংকের টাকা লোকসানের আশংকায় ভুগছেন এ কৃষক। এ অবস্থা শুধু গুলিয়াখালী গ্রামের নয়, পুরো উপজেলার।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এবার সীতাকুণ্ডে ৫৮০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ১৮৫ মেট্রিক টন। এবছর তাপমাত্রা অনুকূলে থাকায় ফলন ভাল হয়েছে। ফলে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো এক হাজার মেট্রিক টন টমাটো বেশি উৎপাদন হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার অন্যতম টমেটো উৎপাদক অঞ্চল মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী গিয়ে দেখা যায়, টমেটোর ক্ষেত জাল দিয়ে সুরক্ষিত করে পরম যতেœ রেখেছিলো কৃষক। কিছু কিছু ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে সেগুলো নিয়ে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। পাইকারি কিনতে আসা কতিপয় ব্যবসায়ীর লোকজন সেগুলোকে আকার ও গুণগতমান অনুসারে বাছাই করে ক্যারেট ভর্তি করছেন। এরপর ক্যারেট পরিমাপ করে গাড়িভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রির জন্য। তবে দাম ভালো না পাওয়ায় অনেকস্থানে টমাটো ফেলে দেওয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। এসব ক্ষেতে গেলে মোহাম্মদ আলীর মতো আরো অনেক কৃষক হতাশার কথা শোনান। এক সৌখিন কৃষক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবুল কালাম বলেন, ১৮ শতক জমিতে টমাটো চাষ করতে তার ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু তিনি মাত্র ৩৮ হাজার টাকার টমাটো বিক্রি করতে পেরেছেন। বর্তমানে এক কেজি টমেটো ৫-৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারি দরে। এই দাম অনুসারে তিনি বড়জোড় ৫-৭ হাজার টাকার বিক্রি করতে পারবেন। তাহলে তার লাভ তো দূরের কথা খরচও উঠবে না।
ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে বাজারে নিয়ে যেতে যে খরচ, তা উঠবে না বলে টমেটো তুলছেন না একই এলাকার কৃষক মো. কাসেম, নুর নবীসহ আরো অনেকে। তারা বলেন, টমেটো তুলতে শ্রমিক মজুরি লাগে, একটা পিকআপ কিংবা ভ্যানে নিয়ে যেতে হয় বাজারে। তোলা এবং বাজারে নিয়ে যেতে যদি ৮’শ কিংবা ১ হাজার টাকা খরচ হয়, তবে সেখানে নিয়ে বিক্রি হয় ৫’শ থেকে ৬’শ টাকায়। তাই আমরা তোলা ছেড়ে দিয়েছি। আবার হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণ করেও রাখতে পারি না। তাই লোকসান হলো চাষ করে। টমেটো চাষে হতাশার কথা জানান, সৈয়দপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. হাশেম, মো. সালামত উল্লাহও।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, এবছর তাপমাত্রা অনুকূলে ছিল। বেশি কুয়াশা কিংবা অসময়ে বৃষ্টি হয়নি। ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হয়েছে। তবে বাজার দর কম হওয়ায় কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, কৃষি লোকসান ঠেকাতে উৎপাদিত সবজি রপ্তানির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি আমরা। তাহলে কৃষকদের আর লোকসান হবে না।
পূর্বকোণ/পিআর