চট্টগ্রাম সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

চন্দনাইশে দুর্ঘটনায় রিকশাচালকের মৃত্যু, অনিশ্চয়তায় ৬ কন্যার জীবন

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ

১৬ মার্চ, ২০২৫ | ১:১০ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দোহাজারী পৌরসদরে বাস চাপায় নিহত ব্যাটারি রিকশা চালক রুহুল আমিনের ৬ কন্যার অনিশ্চিত জীবন। অসহায় হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে ৬ কন্যা সন্তানের ভবিষ্যতের স্বপ্ন।

 

চন্দনাইশ দোহাজারী জামিজুরি গ্রামের রিকশাচালক রুহুল আমিন একটি ছেলে সন্তানের আশায় পর পর ৬টি কন্যা সন্তানের জনক হন। অতি কষ্টে চলে রুহুল আমিনের ৮ সদস্যের সংসার। কিস্তিতে রিকশা নিয়ে চালিয়ে দৈনিক ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা আয় করে টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে চলে সংসার।

 

এরই মাঝে ৪টি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নির্মাণ করেছেন বসত ঘর। মাসে ৪ হাজার টাকা, সপ্তাহে ১ হাজার ৩শ টাকা, ১ হাজার ৩শ পঞ্চাশ টাকা, ১ হাজার ২শ টাকা কিস্তি চালাতে হয়। মাত্র ২৮ দিনের কন্যা শিশুটিও যেন বুঝে গেছে এ পৃথিবীতে তার সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল পিতা আর নেই।

 

রুহুল আমিনের ৬ কন্যা সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে উম্মে সুলতানা বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ছে গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজে এইচএসসি ১ম বর্ষে, দ্বিতীয় মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা রিপা দোহাজারী জামিজুরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে, তৃতীয় মেয়ে আলিফা জামিজুরী মাদ্ররাসার ৪র্থ শ্রেণিতে, ৪র্থ মেয়ে ওয়াকিয়া ২য় শ্রেণিতে পড়ে। তার ৬ কন্যা সন্তান পিতাকে হারিয়ে শোকে মাতাম। ২৮ দিনের নবজাতক ফাইজাসহ ৬ কন্যা সন্তানের দায়িত্ব নেবে কে?

 

সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী রুহুল আমিন সড়ক দুর্ঘটনায় আকস্মিক মৃত্যুর কারণে ৬ কন্যা সন্তানসহ পুরো পরিবারটি অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে। এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় জনমনে। স্ত্রী, ৬ কন্যা সন্তানের ভরণপোষণের একমাত্র ভরসা ছিলেন রুহুল আমিন। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে চলতো সংসার, লোনের কিস্তি ও কন্যাদের পড়ালেখার খরচ। এবার ৬ মেয়েকে ঈদের নতুন জামা-কাপড় কিনে দিয়ে যেতে পারেন নাই রুহুল আমিন।

 

দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার মাত্র ৩০ সেকেন্ডের ব্যবধানে প্রাণে বেঁচে গেলেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইসমত আরা ও তার ছেলে হাফেজ কামরুল ইসলাম। রিকশাটি দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার মাত্র ৩০ সেকেন্ড পূর্বে মা-ছেলে রিকশা থেকে নেমে গিয়েছিলেন। না হলে লাশের সারিটা আরো দীর্ঘ হতো।

 

ইসমত আরা জানান, নিহতদের বাড়ির পাশেই তার বাড়ি। প্রতিদিনের ন্যায় সকালে জসিমের ছেলে আদিল ও মেয়ে রিজভীকে রিকশায় নিয়ে চালক রুহুল আমিন কোচিং সেন্টারে যাচ্ছিলেন। ছেলেকে কক্সবাজারের বাসে তুলে দেয়ার জন্য সকালে ইসমত আরা গ্রামীণ সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাদের দেখে রিকশাতে তুলে নেয় রুহুল আমিন।

 

কিছুদূর যাওয়ার পর হেঁটে কোচিংয়ে যেতে দেখে তুশিনকে ও ডেকে তুলে নেন তার রিকশায়। ইসমত, রিজভী, তুশিন ও আদিলের সাথে রিকশার পেছনে গাদাগাদি করে বসেন তারা। আর রিকশার সামনে বসেন তার ছেলে হাফেজ কামরুল ইসলাম। দোহাজারী পৌর সদরে পৌঁছলে ইমসত ও তার ছেলে কামরুল ইসলাম দুর্ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৩০ গজ দূরে সড়কের অপর প্রান্তে নেমে পড়েন।

 

এসময় ভাড়া দিতে চাইলেও পরে নিবেন বলে সামনে এগিয়ে চলে যায় রুহুল আমিন। রিকশাটি কোচিং সেন্টারের দিকে যাওয়ার সময় পেছন থেকে চাপা দেয় দ্রুত গতির ঘাতক বাসটি। তিনি দৃশ্যটি দেখতে পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন রিকশায় চাপা পড়ে রয়েছে আদিল, রিজভী, তুশিন ও চালক রুহুল আমিন। আর এক মিনিট সময় পেলেই তারা হয়তো কোচিংয়ে ঢুকে যেতে পারতো। বেঁচে যেতো সবার প্রাণ। ইসমত আরা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সাক্ষী হবেন।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট