চট্টগ্রাম শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

মজুত বৃদ্ধি করেও সামলানো যাচ্ছে না চালের বাজার

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৪ মার্চ, ২০২৫ | ১২:২৩ অপরাহ্ণ

দেশে চালের মজুত বৃদ্ধি করেছে সরকার। চাল আমদানি করে মজুত বাড়ানো হয়েছে। সংকট মেটানো ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এমন উদ্যোগ নেয়ার পরও চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ২-৩শ টাকা।

 

খাদ্য কর্মকর্তা ও চাল ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামে সরকারি গুদামে চালের মজুত দ্বিগুণ বেড়েছে। পর্যাপ্ত চাল মজুত থাকার পরও কর্পোরেট গ্রুপগুলো কারসাজি করে চালের দাম বাড়াচ্ছে।

 

খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চট্টগ্রামে সরকারি খাদ্য গুদামে খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৭ মেট্রিক টন। এরমধ্যে চালের মজুত আছে এক লাখ ২৮ হাজার ৫৮৫ মে. টন। গম মজুত রয়েছে ৩৬ হাজার ৫৭৫ টন। গত বছর (২০২৪ সাল) একই সময়ে খাদ্য মজুত ছিল ৮১ হাজার ৩২২ টন। চাল ছিল ৭০ হাজার ৯৮১ টন। গম ছিল ১০ হাজার ২৯৯ টন। এক বছরে চালের মজুত বেড়েছে এক দশমিক ৫৮ গুণ।

 

চালের দাম বৃদ্ধির জন্য কর্পোরেট কোম্পানিগুলোকে দায়ী করেছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের খাদ্য পরিদর্শক (কারিগরি) ফখরুল আলম। তিনি বলেন, সরকার চাল আমদানির পর বাজারে চালের দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু কিছু কোম্পানি বস্তা পাল্টিয়ে ব্র্যান্ডের নামে চালের দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন।

 

ফুডগ্রেন লাইসেন্সের আওতায় খাদ্য অধিদপ্তর ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানান খাদ্য কর্মকর্তা ফখরুল আলম। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম খাদ্য সংকট এলাকা। এখানে ধানি জমি কমে যাচ্ছে। শিল্প-কারখানা বাড়ছে। তাই প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে ৬০-৭০ ট্রাক চাল চট্টগ্রামে আসে।

 

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে খাদ্য মজুত রয়েছে ১৫ লাখ ১৮৩ মেট্রিক টন। এরমধ্যে চাল মজুত আছে ১০ লাখ ৮০ হাজার ২৬৭ টন। গম মজুত আছে ৪ লাখ ১৩ হাজার ৯৪৪ টন। ধান ৮ হাজার ৯৮৫ টন। গত বছরের জানুয়ারি মাসে মজুত ছিল ১৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭৬২ টন।

 

সরকারের আমদানি পরিস্থিতির তথ্য বলছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১১ মার্চ পর্যন্ত সরকার খাদ্যশস্য আমদানি করেছে চার হাজার ৫৭৮ দশমিক ৪২ টন।

 

চট্টগ্রাম চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক জ্ঞানপ্রিয় বিদূষী চাকমা বলেন, সরকার ৯-১০ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক টন খাদ্যশস্য দেশে পৌঁছেছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে চারটি জাহাজ থেকে আমদানি করা চাল খালাস করা হচ্ছে।

 

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন গতকাল পূর্বকোণকে বলেছেন, চাল আমদানির কিছুটা প্রভাব পড়েছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে চার ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি ২-৩শ টাকা বেড়েছে। তিনি বলেন, বাজারে প্রচুর চাল রয়েছে। কয়েকটি কোম্পানি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। চালের ওপর সরকারের কোনো নজরদারি না থাকায় বাজার বার বার অস্থির হয়ে উঠছে।

 

পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সপ্তাহের ব্যবধানে জিরাশাইল, নাজিরশাইল, কাটারি আতপসহ চিকন চালের দাম বস্তাপ্রতি ২-৩শ টাকা বেড়েছে। এতে ফের বিপত্তিতে পড়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। বর্তমানে জিরাশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ৪১০০-৪১৫০ টাকা। এর আগে ৩৯০০-৪০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। নাজিরশাইল ৪২০০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাটারি আতপ ৪০০০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যন্য চালের দাম অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে।

 

কর্পোরেট কোম্পানি ও উত্তর বঙ্গের বড় চাতাল এবং মোকাম সিন্ডিকেটের কাছে চালের বাজার জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছেন প্রবীণ চাল ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রচুর পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বাজার ও বড় ব্যবসায়ীদের গুদামে মনিটরিং করা হলেই বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে।

 

পাইকারি মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অজুহাতে বেড়েছিল চালের দাম। আগস্ট মাসে সরকার পতনের পর আরেক দফা বেড়েছিল। পরিবহন সংকট ও গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে দুই দফায় বাড়ানো হয়েছিল। জুলাই মাস থেকে ক্ষণে ক্ষণে বেড়েছিল চালের দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার চাল আমদানির অনুমতি দেয়। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির পরও বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট