যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনচারীর তিনটি ফ্ল্যাট নিয়ে ডুপ্লেক্স বাসা তৈরি করেছেন নগরীর দক্ষিণ খুলশীতে। পাঁচ রুমের এ বাসায় প্রতিটি কক্ষ অত্যাধুনিক ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্ট লক করা। ছয় সাতমাস আগে সপরিবারে বাসায় উঠেন আনচারী।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। খালি পেয়ে ওই বাসায় ডিজিএফআই পরিচয় দিয়ে হানা দেয় ডাকাতদল। মূল দরজা ভাঙার পর ডাকাতদলের সদস্যরা ওই বাসার ভেতরে থাকা ডিজিটাল ফিঙ্গার লক করা সুর্নির্দিষ্ট দুটি কক্ষের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। তাদের কাছে তথ্য ছিল ওই দুটি কক্ষে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা রয়েছে। টাকা নিতে ২০টি বস্তাও এনেছিল তারা।
প্রশ্ন উঠেছে, ওই বসায় নগদ টাকা থাকার বিষয়টি কিংবা বাসায় কেউ নেই এসব তথ্য ডাকাত দল জানলো কীভাবে। ডাকাতদলের সদস্যরা জানিয়েছে ওই বাসায় নিয়মিত যাতায়াত আছে এমন কেউ ডাকাতির পরিকল্পনায় জড়িত। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) রইছ উদ্দিন (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) জানান, যাদের ধরা হয়েছে তাদের মধ্যে ওয়াজেদ রাকিব নামে একজন বালু সরবরাহকারী রয়েছে। তিনিই মূলত সবাইকে সংগঠিত করে ডাকাতির পরিকল্পনা করে।
জানা যায়, দক্ষিণ খুলশীর সানমার রয়েল রিচ ভবনের ৮-বি, ৯বি ও ৯সি তিন ফ্ল্যাট নিয়ে ডুপ্লেক্স বাসায় থাকতেন যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনচারী। তার ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। মেয়ে জামালখানের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। আটতলার ফ্ল্যাট দিয়ে প্রবেশ করে নয় তলায় যাওয়া যায় অনায়াসে। নয় তলার তিনটি কক্ষ ও আট তলার দুটি কক্ষের দরজায় ডিজিটাল লক লাগানো। প্রতিটি লক খুলতে ফিঙ্গার প্রিন্টের প্রয়োজন হয়। ডাকাত দল আটতলার মূল দরজা ভেঙে প্রবেশ করে ভেতরের সিঁড়ি দিয়ে নয় তলায় উঠে দুটি কক্ষের ডিজিটাল ফিঙ্গার লক ভাঙার চেষ্টা করে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতদলের সদস্যরা জানিয়েছে, ওই বাসায় যাতায়াত আছে এমন একজন ব্যক্তি তাদের জানিয়েছে, বাসার দুটি কক্ষে কয়েকশ কোটি নগদ টাকা রয়েছে। বিগত একমাস ধরে তারা ডাকাতির পরিকল্পনা করে। শুক্রবার বাসায় কেউ না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তারা সেখানে হানা দেয়। ওই পরিবারে আসা যাওয়া আছে গিয়াস উদ্দিন আনচারীর ঘনিষ্ট এমন এক ব্যক্তির সহযোগিতায় তারা ডাকাতির পরিকল্পনা করে। টাকা নেয়ার জন্য তারা ২০টি বস্তাও নিয়ে এসেছিল। দুটি মাইক্রোবাসে ডাকাতদলের ২০ সদস্য ছিল। এদের মধ্যে ১২ জন আটক হলেও ৮ জন পলাতক রয়েছে।
নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ কমিশনার (ডিসি) ফয়সাল আহমেদ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের গ্রেপ্তার ডাকাতদলের সদস্যরা জানিয়েছে, তাদের কাছে তথ্য ছিল ওই বাসায় নগদ টাকা রয়েছ। ওই টাকার লোভে তারা ডাকাতি করতে গিয়েছিল। তবে তারা টাকার থাকার বিয়ষটি কীভাবে জানলো তা তদন্ত করে দেখছেন বলে জানা ডিসি ফয়সাল।
এজাহারে যা বলা হয়েছে: খুলশী থানায় গতকাল শনিবার এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেন যমুনা অয়েলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনচারী। ২০ জনকে এজাহারভুক্ত ও ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে দায়ের করা ওই মামলায় তিনি বলেন, গত শুক্রবার ফ্ল্যাটের তালা বন্ধ করে তিনি সপরিবারে কক্সবাজার বেড়াতে যান।
রাত সাড়ে দশটার সময় ভবনের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম তাকে ফোন করে জানান, দুটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাসে (চট্টমেট্রো-চ-১১-৫৯৩১) ২২/২৩ জন ব্যক্তি ভবনের গেটের সামনে দাঁড়ায়। তারা নিজেদের ডিজিএফআই পরিচয় দিয়ে ভবনের পার্কিংযে প্রবেশ করে দুইজন নিরাপত্তা প্রহরী ও একজন গাড়ি চালককে বেঁধে ফেলে। পরে ডাকাতদলের ছয়জন আটতলার ৮-বি ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। তারা আলমারি ও ড্রয়ার খুলে স্বর্ণালংকার ও টাকার খোঁজ করে।
কয়েকজন ডাকাত ডুপ্লেক্স বাসার ভেতরের সিঁড়ি দিয়ে নয়তলার ৯-বি ও ৯সি ফ্ল্যাটে ঢুকে সেখানেও ড্রয়ারসহ ওয়াল আলমিরা খুলে স্বর্ণালংকার ও টাকা খুঁজে। এক পর্যায়ে ফ্ল্যাটের ভেতরে থাকা দুটি রুমের দরজার ডিজিটাল লক ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরমধ্যে প্রতিবেশী এ-৭ ফ্ল্যাটের মালিক ভাংচুরের শব্দ শুনে ম্যানেজারকে বললে ম্যানেজার খুলশী থানায় খবর দেয়। ডাকাতদলের অন্য সদস্যরা ভবনের প্রবেশমুখের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ডিভিআর খুলে নিয়ে যায়। ডাকাতদলের সবার বয়স ৩৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী।
পলাতক ৮ জন: ডাকাতির ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে ধরা পড়েছে ১২ জন। দুই মাইক্রোবাসে ডাকাতদলের মোট সদস্য ছিল ২০ জন। এদের মধ্যে আটজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তারা হলেন, খুলশীর ফরহাদুল ইসলাম (৩৫), মিরসরাইয়ের এন আলম (৫০), শওকত (৩৫), হাটহাজারীর মানিক (৪৫), ওয়াসিম (৪৫), আজমান (৩৫), রাউজানের অসিম বড়–য়া (৪৫) ও বন্দর এলাকার বাবুল ড্রাইভার।
পূর্বকোণ/ইব