চাঁদপুরের মেঘনায় জাহাজে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া সজীবুল ইসলামকে হারানোর শোকে কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন তার বাবা দাউদ মোল্যা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১২টায় মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের নিজ বাড়িতেই তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুহম্মদপুর থানার ওসি আব্দুর রহমান।
ছেলের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর শোকে বাবারও মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
সজিবুলের মামা আহাদ সর্দার বলেন, মঙ্গলবার ছেলে সজিবুলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে দাউদ মোল্লা কেঁদেই চলছিলেন। স্বজনদের কেনো সান্ত্বনাই তাকে বোঝানো যায়নি। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর বাড়িতেই তার মৃত্যু হয়।
পাঁচ বছর ধরে জাহাজের বিভিন্ন পদে চাকরি করেছিলেন সজিবুল ইসলাম। সম্প্রতি জাহাজের চাকরিতে পদোন্নতি পেতে পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। সেই ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন।
মাঝের এই সময়টায় অলস বসে না থেকে সপ্তাহ দুয়েক আগে এমভি আল-বাখেরা জাহাজে গ্রিজার পদে চাকরি নেন তিনি।
আহাদ সর্দার বলেন, পদোন্নতি হলে বেতন বাড়বে, বড় জাহাজে চাকরি হবে- এ কারণে পরীক্ষা দিয়েছিল। দুই সপ্তাহ আগে বাড়িতে ধান কাটার কাজ করে গেছে।
যাওয়ার সময় বাড়িতে বলে গেছে রেজাল্টের অপেক্ষায় ঘরে বসে না থেকে ছোট একটা জাহাজে কাজ করে আসি, তাতে কিছু রোজগার হবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে মহম্মদপুর ও নড়াইল সীমান্তবর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের বহু মানুষ জাহাজে চাকরি করেন। মেঘনায় জাহাজে নিহতদের আরেকজনও একই ইউনিয়নের বাসিন্দা।
১৬ বছরের সেই কিশোরের নাম মো. মাজিদুল ইসলাম। তিনি চর যশোবন্তপুর গ্রামের আনিচুর রহমানের ছেলে।
ঝামা বরকাতুল উলুম ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাজিদুল মাদরাসা বন্ধ থাকায় জাহাজে কাজ নিয়েছিল।
এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এমভি সুলতান সানজানা নামের লাইটার জাহাজডুবির ঘটনায় মহম্মদপুর পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের চারজন নিহত হয়েছিলেন।
এর আগে সোমবার বিকালে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীতে এমভি ‘আল বাখেরাহ’ জাহাজ থেকে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ সময় গুরুতর আহত আরও তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ১০ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা হয়েছে। জাহাজের মালিকের পক্ষে মাহাবুব মুর্শেদ বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে হাইমচর থানায় মামলাটি করেন বলে চাঁদপুর নৌ-পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান।
একইদিন চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত সাতজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন।
নিহতরা হলেন- জাহাজের মাস্টার ফরিদপুর জোয়াইর উপজেলার মো. গোলাম কিবরিয়া (৬৫), তার ভাগনে জাহাজের লস্কর শেখ সবুজ (৩৫), জাহাজের সুকানি নড়াইলের লোহাগড়ার আমিনুল মুন্সী (৪০), জাহাজের লস্কর মাগুরার মোহাম্মদপুরের মাজেদুল ইসলাম (১৭), একই এলাকার লস্কর সজিবুল ইসলাম (২৬), নড়াইল লোহাগড়া এলাকার জাহাজের ইঞ্জিন চালক মো. সালাউদ্দিন মোল্লা (৪০) এবং মুন্সিগঞ্জ শ্রীনগর থানার জাহাজের বাবুর্চি রানা (২০)।
পূর্বকোণ/এএইচ