১২৫ বছর ধরে শিক্ষার মশাল জ্বালিয়ে যাচ্ছে উত্তর চট্টগ্রামের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ রাউজান রামগতি ধর, রামধন ধর ও আবদুল বারী চৌধুরী মডেল সরকারি হাইস্কুল। এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন দেশের বড় বড় অনেক রাজনীতিক, বিচারক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠাতা, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ নানা শ্রেণিপেশার প্রতিষ্ঠিত সুধীজন। গোড়াপত্তন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি সুশিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে।
রাউজানের মূল সদরে ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ের ১২৫ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) নগরীর নাসিরাবাদ কনভেনশন হলে রাউজান আরআরএসি ইনস্টিটিউশন প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের পুনর্মিলনী ও স্কুলের ১২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানকে জাঁকজমকপূর্ণ ও অর্থবহ করে তুলতে নেয়া হচ্ছে নানা প্রস্তুতি। অনুষ্ঠানটি প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ সুধীজনের মিলনমেলায় পরিণত হওয়ার আশা করছেন আয়োজকরা।
জানা যায়, ১৮৩৫ সালে জমিদার দাতারামের প্রচেষ্টায় সুলতানপুরের একপ্রান্তে এ বিদ্যাপীঠের শুরু। ১৮৬২ সালে রাউজানের তদানীন্তন মুন্সেফ শোকর আলী এ বিদ্যাপীঠকে থানা সদরে স্থানান্তর করেন। পরে ঢাকার নওয়াব আবদুল গনি চৌধুরীর সহায়তায় এর প্রতিষ্ঠা সুদৃঢ হয়। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বাবু ক্ষীরোদ চন্দ্র বিশ্বাসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ডাবুয়ার তৎকালীন জমিদার রামগতি ধর ও বৈষয়িক আনুক‚ল্যে ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং একই বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯১৯ সালে উপমহাদেশের মুকুটহীন সম্রাট আবদুর বারী চৌধুরীর অর্থানুক‚ল্যে এ প্রতিষ্ঠানের পাশে অন্য আরেকটি বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। ১৯২১ সালে স্থানীয় জনগণ ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগী মাওলানা আবুল কাশেম বিএল এবং রমেশ চন্দ্র ধরের আন্তরিক প্রচেষ্টায় উভয় বিদ্যাপীঠকে সমন্বিত করে রাউজান রামগতি-রামধন-আবদুল বারী চৌধুরী (আরআরএসি) উচ্চ বিদ্যালয় নামে এ বিদ্যাপীঠের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
তখন আরআরএসি ইনস্টিটিউশনের মূল গৃহটি ছিল মাটির তৈরি ও টিনের ছাউনিযুক্ত এবং অবস্থান ছিল ‘উ’ আকৃতির।
১৯৩৪ সালে নতুন ভবন, বর্তমানে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৩৭ সালে মাটির ঘর ভেঙে নতুন পাকা ভবন তৈরি করা হয় এবং ১৯৩৮ সালে নতুন ভবনে ক্লাস শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের প্রজ্ঞাপন আসে। এ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন দৈনিক পূর্বকোণের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী, দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক, সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, দৈনিক আজাদীর সাবেক সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. রনজিত ধর, দৈনিক আজাদীর সাবেক বার্তা সম্পাদক সাধন ধর, মোছলেহ উদ্দিন এফসিএসহ বহু প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অবদান রাখা ব্যক্তিবর্গ।
বর্তমানে স্কুলটি পড়ালেখার মানের দিক থেকে অনেক উন্নত। এ প্রসঙ্গে বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহমদ বলেন, এ স্কুলকে আমরা পড়ালেখায় রাউজানের সেরা স্কুলে পরিণত করতে চাই। বিগত এসএসসির ফলাফলে এ স্কুলে পাসের হার ৯৭ শতাংশ। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে রাউজানে ২য় অবস্থানে এ স্কুল। বর্তমানে এখানে ৯৪৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক আছেন ১৭ জন। কর্মচারী আছেন সাতজন। এখানে শিক্ষার্থীর তুলনায় বিদ্যালয় ভবনের সংকট রয়েছে। বর্তমানে এ স্কুলের ৭টি ভবনের মধ্যে ৪টিই খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য এখানে নতুন ভবনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
রাউজান আরআরএসি ইনস্টিটিউশন প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক আ স ম ইয়াছিন মাহমুদ বলেন, এ ঐতিহ্যবাহী স্কুলের বীরত্বগাথা এবং ঐতিহ্য ধরে রাখতে আরআরএসি ইনস্টিটিউশন প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের পুনর্মিলনী ও রাউজান স্কুলের ১২৫ বছর পূর্তি করতে যাচ্ছি। এখানে যারা পড়ালেখা করে গেছেন, সেসব প্রথিতযশা সাবেক ছাত্রছাত্রী নিজ নিজ অঙ্গনে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে গেছেন। আশা করি এ অনুষ্ঠানে প্রাক্তনরা এক কাতারে মিলিত হবেন।
পূর্বকোণ/ইব