বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন সময়ের ৩৬ দিনের তথ্য চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে নগর পুলিশের কাছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত কাজে সহায়তার জন্য ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ দিনের আন্দোলনের সাত ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে সারাদেশে। আন্দোলনে সারাদেশে কতজন হতাহত হয়েছে তার সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান এখনও নির্ধারণ হয়নি। এরমধ্যে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিভাগে আন্দোলনে নিহত ১০৫ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’। চট্টগ্রামে নিহত নয় শহীদ পরিবার ও আহত ৫৩ ছাত্র-জনতাকে গত সোমবার সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করেছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। যাদের অধিকাংশ মারা গেছে গুলিবিদ্ধ হয়ে।
গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল প্রথম ধাপের খসড়া তালিকায় আন্দোলনে ৮৫৮ জন নিহত ও সাড়ে ১১ হাজার আহত ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেছে। গত ২১ ডিসেম্বর বিশেষ সেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব খন্দকার জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এ অবস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত কাজে সহায়তার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের চাহিদা মোতাবেক সাত ধরনের তথ্য চেয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) চার অপরাধ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারদের (ডিসি) কাছে চিঠি দিয়েছে নগর পুলিশ কমিশনার।
পুলিশ কমিশনারের পক্ষে চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) মো. রইছ উদ্দিন। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সাবেক সরকারের বিভিন্ন বাহিনী এবং দলীয় ক্যাডার কর্তৃক ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তকাজে সহায়তা জন্য ‘ছক’ মোতাবেক তথ্যাদি আগামী ২৯ ডিসেম্বর সকাল দশটার মধ্যে পাঠাতে অনুরোধ করা হল। তথ্যের হার্ডকপি এবং সফটকপি পাঠানোর কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।
যে সাত ধরনের তথ্যের চাওয়া হয়েছে তা হল, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন চলাকালীন সময়ে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রের নাম ও পরিচিতি নম্বর, কর্তব্যে নিয়োজিত হওয়ার তারিখ, সময় ও স্থান, গুলিবর্ষণ হয়ে থাকলে তার সংখ্যা ও অস্ত্রের ধরন, অস্ত্র ব্যবহারকারী সদস্যদের নাম ও পরিচিতি, হতাহত হয়ে থাকলে তাদের বিবরণ, নির্বাহী তদন্ত হয়ে থাকলে তার প্রতিবেদন কপি এবং অন্যান্য আবশ্যক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
নির্বাহী তদন্তের উদ্যোগ পুলিশের: এর আগে আন্দোলনের সময় সারাদেশে সংগঠিত প্রতিটি গুলিবর্ষণের ঘটনার নির্বাহী তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এতে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ছাত্র জনতার ওপর কারা গুলি করেছে তার সঠিক তথ্য উঠে আসবে এমনটি ধারণা করা হচ্ছে। গত ৩ ডিসেম্বর সদর দপ্তরের ডিআইজি কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবর্ষণের ঘটনায় সাধারণভাবে পুলিশের ওপর সকল দায়ভার অর্পিত হচ্ছে। এর ফলে পুলিশ সদস্যদের মনোবলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য গুলিবর্ষণের প্রতিটি ঘটনার নির্বাহী তদন্ত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। এতে গুলিবর্ষণ যথাযথ (ন্যায়সঙ্গত/অন্যায়ভাবে) হয়েছে কিনা তা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অনেক পুলিশ সদস্য অনাকাঙ্খিত দায় হতে নিষ্কৃতি পাবে। প্রতিটি ইউনিটের গুলিবর্ষণের সকল ঘটনা বিধি-বিধান অনুসরণ করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাহী তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে চিঠিতে।
পূর্বকোণ/ইব