সকাল তখন ১০টা। খোলা মাঠে পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ-শিশু জড়ো হয়েছেন। কেউ বস্তায় ভরে মাথায় করে, আবার কেউ ভ্যানে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও পলিথিন নিয়ে এসেছেন। কড়া রোদ উপেক্ষা করে অপেক্ষায় আছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার’ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করতে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) এ দৃশ্য দেখা যায় নগরের বাকলিয়ার বাস্তুহারা কলোনি এলাকার মাঠে। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগে খুশি স্থানীয়রা। টাকা ছাড়া প্লাস্টিক দিয়ে পণ্য সরবরাহের এই কার্যক্রম এটাই প্রথম নয়। সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে দু’বছর আগে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
গতকালের কার্যক্রমে অংশ নিয়ে স্থানীয়রা এক কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে ছয়টি ডিম, আধা কেজি সুজি, একটি পরনের কাপড় পেয়েছেন। আবার তিন কেজি পলিথিন বা প্লাস্টিকের পরিবর্তে পেয়েছেন এক কেজি চিনি, দুই কেজি আটা; চার কেজির বিনিময়ে একটি মাছ, এক লিটার সয়াবিন তেল; ছয় কেজির বিনিময়ে একটি মুরগি। গৃহস্থালি পণ্যের পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণও সংগ্রহ করেছেন অনেকে। এক কেজি প্লাস্টিক বা পলিথিনের বিনিময়ে ১২টি কলম, কিংবা চারটি পেন্সিল অথবা খাতা সংগ্রহ করেন তারা। এছাড়াও আট কেজি প্লাস্টিক বা পলিথিন দিয়ে মিলেছে একটি স্কুল ব্যাগ।
বাকলিয়া স্টেডিয়ামে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা বন্দরনগরীর প্রধান সমস্যা। পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জন করতে পারলে আমরা জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান পাবো।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, প্রথমদিন ৫ মেট্রিকটন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করেছে আয়োজকেরা। সংগৃহীত প্লাস্টিক বাংলাদেশ পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানির মাধ্যমে রিসাইক্লিং করা হবে। এই পাইলট প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর। প্রকল্পের অধীনে পতেঙ্গা ও হালিশহরে দুটি স্থায়ী স্টোর চালু থাকবে। এছাড়া ৫০টি ভ্রাম্যমাণ বাজার ক্যাম্প হবে। যেখানে প্রতি ইভেন্টে ৫ শতাধিক পরিবার প্লাস্টিক জমা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নিতে পারবেন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার জামাল উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিনকে দূষণমুক্ত করতে ২০২২ সালে সেখানে প্রথম ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ করা হয়েছিল। সে উদ্যোগ সফল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কক্সবাজারে এবং স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। চট্টগ্রামে এ প্রকল্পের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের।
জামাল বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় আমরা প্রতিবছর দুই লাখ কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহের টার্গেট করেছি। নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে এ ধরনের আয়োজন করা হবে। প্রথম বছর দুই লাখ কেজি প্লাস্টিক সংগ্রহের জন্য আমরা এক কোটি ২০ লাখ টাকার পণ্য দিচ্ছি। প্লাস্টিকগুলো রিসাইকেল কোম্পানিকে দেওয়ার পর তারা আমাদের দেবে ৬০ লাখ টাকা। এভাবে প্রতিবছর অর্ধেক টাকা উঠে আসায় চতুর্থ বছরে গিয়ে এ বিনিময় প্রক্রিয়ায় আমাদের পক্ষ থেকে আর কোনো ধরনের ভর্তুকি দিতে হবে না।
পূর্বকোণ/ইব