চট্টগ্রাম বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

নিত্যপণ্যের বাজার বেসামাল

পূর্বকোণ ডেস্ক

২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১২:০৪ অপরাহ্ণ

২০২৪ সালজুড়েই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। স্বল্প আয়ের মানুষকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলে দাম কমেনি। চলতি বছরের শুরু থেকেই ঊর্ধ্বমুখী খাদ্য মূল্যস্ফীতি বছরের শেষভাগে এসেও বেড়েছে। গত এপ্রিলে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি। জুলাইতে সেটি পৌঁছে যায় ১৪ শতাংশে।

 

সবজি : গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরের বন্যা ও অতিবৃষ্টির প্রভাবে বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে শাক-সবজির দাম। অক্টোবর মাসে প্রায় সব সবজির দাম উঠে যায় ১০০ টাকার ওপরে। নভেম্বরের শুরুতে সেটি কিছুটা কমে এখন ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে মিলছে নানা সবজি।

 

আলু : চলতি বছরের শুরু থেকে লাগামহীন আলু বাজার। বছরের মাঝামাঝি দাম কিছুটা কমলেও অক্টোবরের শেষ দিকে এসে ফের ঊর্ধ্বমুখী দাম। দাম নিয়ন্ত্রণে শুল্ক প্রত্যাহার করেছিল এনবিআর। তবে বাজারে প্রভাব পড়েনি। ডিসেম্বরের প্রথমদিকে নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকা কেজিতে। ডিসেম্বরের শেষদিকে নতুন আলুর দাম কমতে শুরু করেছে। ৬০ থেকে ৮০ টাকায় মিলছে।

 

পেঁয়াজ : পুরো বছর জুড়েই ওঠানামার মধ্যে ছিল পেঁয়াজের বাজার। মূলত ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় দামে প্রভাব পড়ে। ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ওঠানামার ছিল। তবে সম্প্রতি পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় দেশটি। এতে দাম পড়তির দিকে।

 

তেল : অস্থির ছিল দেশের ভোজ্যতেলের বাজার। নভেম্বরের শুরুতে এসে ফের অস্থিরতা শুরু হয় বাজারে। বোতলজাত তেলের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা যায় খোলা ভোজ্যতেল। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মূসক অব্যাহতি দিয়েছিল এনবিআর। এতে বাজারে সামান্য কমে দাম। তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসে বাজার থেকে উধাও হতে শুরু করেছে ১ ও ২ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল। আবার ৮ টাকাও দাম বাড়ানোর পর মিলছে ভোজ্যতেল।

 

কাঁচামরিচ : সবচেয়ে বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছে কাঁচা মরিচ। কোরবানির ঈদের ঠিক আগমুহূর্তে দেশের বাজারে হঠাৎ করেই বেড়ে যায় মরিচের দাম। প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হতে দেখা যায় ৪০০-৫০০ টাকা। এরপর নভেম্বর পর্যন্ত দফায় দফায় ওঠানামা করে দাম। তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসে দাম পড়ে যায় কাঁচা মরিচের। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকার মধ্যে।

 

মুরগি : বছরজুড়ে ওঠানামা করেছে মুরগির বাজার। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৬০ টাকা কেজিতে। পাশাপাশি বাড়তি দামে বিক্রি হয় সোনালি, দেশি ও লাল লেয়ার মুরগিও। গত এপ্রিল-মে মাসে তীব্র গরম ও সরবরাহ ঘাটতির অজুহাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার ২৬০ টাকা, দেশি মুরগি ৭০০ টাকা, সোনালি মুরগি ৪০০ টাকা, লাল লেয়ার ৩৪০ টাকা ও সাদা লেয়ার বিক্রি হয়েছে ২৯০ টাকা পর্যন্ত। এরপর দাম কমে বাজার কিছুটা স্থিতিশীলই ছিল।

 

তবে আগস্টে বন্যায় খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফের দাম বাড়ে মুরগির। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার দাম কমতে শুরু করে। তবে গত সেপ্টেম্বরে সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেঁধে দেয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। যা বাজারের দরের চেয়ে বেশি। এই সুযোগে ফের লাফিয়ে লাফিয়ে মুরগির দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। ফলে সোনালি মুরগির কেজি ৩২০ টাকা ও ব্রয়লারের কেজি গিয়ে ঠেকে ২১০ টাকায়। নভেম্বরের শেষ দিকে এসে আবার কমতে শুরু করে মুরগির দাম। তবে এখন আবার বাড়তির দিকে দাম।

 

ডিম : প্রতি ডজন লাল ডিমের ১৮০-১৯০ টাকা ও প্রতি ডজন সাদা ডিমের দাম উঠে যায় ১৭৫ টাকা পর্যন্ত। আগস্টে বন্যায় খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডিমের দাম বাড়তে শুরু করে। এর ফলে গত সেপ্টেম্বরে ডিমের উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেঁধে দেয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। এতে দাম না কমলে ভারত থেকে ডিম আমদানির পথে হাটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি কমানো হয় শুল্কও। এরপর কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ডিমের বাজারে।

 

চাল : বছরের শুরুতেই হঠাৎ নির্বাচনের অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। ফেব্রæয়ারি-মার্চে দাম বাড়ে আরেক দফা। তবে অন্যান্য বছর রোজায় চালের দাম না বাড়লেও এবছর সরবরাহ সংকটের দোহাই দিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন মিল-মালিকরা। যার প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারেও। অবশেষে দাম নিয়ন্ত্রণে দুদফায় চাল আমদানিতে শুল্ক পুরোপুরি তুলে নিয়েছে সরকার। বিক্রেতারা জানান, নতুন করে আর না বাড়লেও চালের দাম কমেনি। কিছু ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট