বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল এম এ আজিজ স্টেডিয়াম বরাদ্দ চেয়েছিলেন ২৫ বছরের জন্য। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) চেয়ারম্যান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বরাদ্দ দিয়েছেন ১০ বছরের জন্য। এনএসসির এমন সিদ্ধান্তে এটা পরিষ্কার, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে এখন থেকে শুধু ফুটবলই হবে। বাফুফেও পরিকল্পনা গ্রহণ করছে ভেন্যুটিকে আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তর করতে।
চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকগণ মনে করছেন, ফুটবলের জন্য এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী প্রভাব ফেলবে চট্টগ্রামে। অনেকে আবার ‘যদি-কিন্তু’ জুড়ে দিচ্ছেন। কারণ, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা মৌসুমে বিভিন্ন ইভেন্টে লিগ, টুর্নামেন্টসহ বয়সভিত্তিক খেলাধুলার আয়োজন করে। সংখ্যা ৩৬ ছাপিয়ে চলে যায় ৪০ এর ঘরেও। অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পর্যায়ের ইভেন্ট। ক্রীড়া সংগঠকদের প্রশ্ন, অন্য ইভেন্টগুলোর তাহলে কি হবে? এনএসসির সর্বশেষ ঘোষণায় এ নিয়ে কোন দিক নির্দেশনা ছিল না।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র সাবেক পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর বলেন, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এনএসসি বাফুফেকে বরাদ্দ দিলেও ঘোষণায় অন্য ইভেন্টগুলোর জন্য কোন দিক নির্দেশনা আসেনি। এই একটি মাঠে ফুটবলার, ক্রিকেটাররা যেমন অনুশীলন করেন, লিগ/টুর্নামেন্ট খেলেন তেমনি ঘাম ঝরান হকি, কাবাড়িসহ আরও অনেক ইভেন্টের ক্রীড়াবিদগণ। বাফুফে যদি ভেন্যুটির পূর্ণ দায়িত্বে থাকে তাহলে স্থানীয় ক্রীড়াবিদরা অনুশীলন করবে কোথায়, লিগ খেলবে কোথায়? চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ক্রীড়া সংগঠকগণ এনএসসির পরবর্তী দিক নির্দেশনার অপেক্ষায়।
সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর আরও বলেন, ফুটবল ক্রিকেটসহ অন্যতম ইভেন্টগুলো জন্য আমরা সবাই চাই বিশেষায়িত ভেন্যু। সেদিক থেকে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রামেও প্রায় ব্যবহার হয় না এমন ভেন্যু আছে। শুধু ফুটবলই নয়, ক্রিকেট বা হকির জন্য সে ভেন্যুগুলোকে বিশেষায়িত করা যায় কিনা, ভেবে দেখার অনুরোধ করবো। এনএসসি নিশ্চয়ই অবগত আছে, মৌসুমে কীভাবে বিভিন্ন ইভেন্ট পরিচালনা করে জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস)।
কথাগুলো বলে সিজেকেএস ক্রিকেট কমিটির সাবেক সম্পাদক আব্দুল হান্নান আকবর যোগ করেন, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এনএসসির মাধ্যমে সিজেকেএস ব্যবহার করে আসছে এতকাল। এখন স্টেডিয়াম বাফুফেকে বরাদ্দ দিয়েছে এনএসসি। তাহলে সিজেকেএস কোন ভেন্যুতে নিয়মিত ইভেন্টগুলো আয়োজন করবে?
এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে বিশেষায়িত ফুটবল ভেন্যুর দাবিতে আগে থেকেই সোচ্চার ছিলেন দেশের স্বনামখ্যাত ফুটবল কোচ নজরুল ইসলাম লেদু। সর্বশেষ ঘোষণায় তিনি ক্রীড়া উপদেষ্টার সাথে এনএসসিকে ধন্যবাদ জানান। একইসাথে চট্টগ্রামের অন্যান্য খেলাধুলার দিকেও যথাযথ দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান। স্টেডিয়ামের মূল মাঠে জাতীয় স্টেডিয়ামের আদলে এথলেটিক্স ট্র্যাক স্থাপনের দাবিও রাখেন তিনি। বর্ষীয়ান ক্রীড়া সংগঠক ও সিজেকেএস সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আবুল বশর সিদ্ধান্তটি পুনঃবিবেচনার আহ্বান জানান। অথবা ১০ বছরের জন্য চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়ার কথা বলেন। কারণ, এই সিদ্ধান্তে সিজেকেএস পরিচালিত সকল খেলাধুলা কার্যত বন্ধই হয়ে যাবে।
প্রায় একই মন্তব্য চট্টগ্রাম আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরীরও। তিনি বলেন, একটি মাঠে অনেকগুলো ইভেন্ট আয়োজন করতে গিয়ে এমনিতেই গলদঘর্ম অবস্থা, সাথে ভেন্যু সিজেকেএস’র আওতায় না থাকলে চট্টগ্রামের খেলাধুলারই ইতি ঘটবে। তিনিও সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্তটি পুনঃ বিবেচনার আহ্বান জানান।
সাবেক ফিফা রেফারি আব্দুল হান্নান মিরণও সিদ্ধান্তটিকে আত্মঘাতী বলে মনে করছেন। কারণ, চট্টগ্রামের ঘরোয়া ফুটবলসহ অন্যান্য ইভেন্ট নিয়মিত আয়োজন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে সার্বিক পরিস্থিতি নিজেদের অনুক‚লে আনতে সিজেকেএস কাউন্সিলরগণ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্মকর্তাদের সাথে বসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন বলে মনে করছি।
পূর্বকোণ/ইব