চট্টগ্রাম সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

লুট করা স্বর্ণালংকার-টাকা কে নিলো জানে না পুলিশ

এএসআই’র নেতৃত্বে বাকলিয়ায় ডাকাতি

নাজিম মুহাম্মদ

২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ২:৩৫ অপরাহ্ণ

পুলিশের এক এএসআই’র নেতৃত্বে নগরীর বাকলিয়া কল্পলোক আবাসিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীর বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে গত ৫ ডিসেম্বর রাতে। স্থানীয় লোকজন ডাকাতিতে অভিযুক্ত এএসআইসহ ছয়জনকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা। এগুলো কে নিয়ে গেছে তাও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ডাকাতির সময় লুট করা হয়েছিল নগদ ৩৬ হাজার টাকা, চার জোড়া কানের দুল, তিনটি আংটি, দুই জোড়া স্বর্ণের বালা, একটি লকেটসহ মোট আট ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার। যার আনুমানিক বাজারমূল্য আট লাখ ৮০ হাজার টাকা। স্থানীয় লোকজনের দাবি, ডাকাতির ঘটনার পর হাতেনাতে পাঁচজন জনতার হাতে ধরা পড়লে লুট করা টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যান এএসআই ফারুক মিয়া। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও লুট করা স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা উদ্ধার করা যায়নি।

 

নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সুলতানা জানান, লুট হওয়া টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা যায়নি। ডাকাতিতে অংশ নেয়া পলাতক আসামিরা এসব কিছু নিয়ে যেতে পারে। আবার ঘটনার পরপর ডাকাতিতে জড়িতদের সাথে স্থানীয় লোকজনের হাতাহাতি হয়েছে। ওই সময় কেউ টাকা ও স্বর্ণালংকারগুলো নিয়ে থাকতে পারে। তবে কারা নিয়ে গেছে তা নিশ্চিত হতে পারিনি আমরা। ঘটনার শিকার রোহিঙ্গা পরিবারটিকে ইতোমধ্যে শরণার্থী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান ডিসি শাকিলা।

 

সেদিন রাতে যা ঘটেছিল:
উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিবি জান (৩৫) ও রোকসানা (২৫) শ্বশুর লাল মিয়াসহ দুই মাস আগে থেকে বাকলিয়া কল্পলোক আবাসিক এলাকার নর্ম ভিলায় দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ বসবাস করছিলেন। গত ৫ ডিসেম্বর রাত দশটায় এএসআই ফারুকসহ ১৪-১৫ জন এসে লাল মিয়ার ফ্ল্যাট কয় তলায় তা জানতে চান। তারা নয়তলায় থাকেন- তা জানার পর এএসআই ফারুক ও তার সহযোগীরা লিফটে নয়তলায় উঠেন। তাদের প্রায় সবার মুখে মাস্ক পরা ছিল। একজনের মাথায় হেলমেট ছিল।

 

 

তারা রোহিঙ্গা লাল মিয়ার ফ্ল্যাটে ঢুকে নিজেদের পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে লাল মিয়ার মেয়ে বিবি জান ও ছেলের বউ রোকসানার কাছ থেকে আলমারির চাবি নিয়ে নগদ ৩৬ হাজার টাকা, চার জোড়া কানের দুল, তিনটি আংটি, দুই জোড়া স্বর্ণের বালা, একটি লকেটসহ মোট আট ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার লুট করেন। এ ঘটনায় কল্পলোক আবাসিক এলাকার নর্ম ভিলার কেয়ারটেকার আবদুল আজিজ বাদী হয়ে বাকলিয়া থানায় নয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

 

কেয়ারটেকার আবদুল আজিজ বলেন, ঘটনার সময় তিনি দরজার বাইরে অবস্থান করছিলেন। ফ্ল্যাটের ভিতর এএসআই ফারুকের সাথে যারা ছিলেন তাদের অনেকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিলেন। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে তারা টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে বের হয়ে যান। এ সময় লাল মিয়া টাকা ও স্বর্ণালংকার ফেরত চাইলে তারা পুলিশের ভয় দেখিয়ে হুমকি দেন। তারা যখন ফ্ল্যাট থেকে নিচে নেমে গেট দিয়ে বের হন তখন স্থানীয় লোকজন ও নিচে থাকা কিছু ছাত্র পাঁচজনকে আটক করেন। এ সময় এএসআই ফারুকসহ বাকিরা পালিয়ে যান।

 

স্থানীয় লোকজন জানান, ডাকাতির খবর পেয়ে বাকলিয়া থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে জনতার হাতে আটক পাঁচজনকে থানায় নিয়ে যান। তখনও এএসআই ফারুক ধরা পড়েননি।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এএসআই ফারুক লুট করা টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যথারীতি ফাঁড়িতে অবস্থান করছিলেন। ডাকাতির ঘটনায় ফারুকের জড়িত থাকার বিষয়টি গোপন করতে চেষ্টা করেছিল থানা পুলিশ। বিষয়টি পুলিশ কমিশনারের কানে গেলে তার আদেশে ফাঁড়ি থেকে ডেকে ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

ডাকাতিতে জড়িত থাকার অপরাধে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন- বাকলিয়া থানার চাকতাই ফাঁড়ির এএসআই ফারুক মিয়া, পটিয়ার লাম্বুর হাটের মৃত মুক্তার আহমদের ছেলে জয়নাল আবেদীন (৩০), রাউজানের পাঁচখাইন ইউনিয়নের মৃত বশির আহমদের ছেলে মো. আকবর (৪১), বাঁশখালীর চাম্বল গ্রামের বদি আলমের ছেলে মিজানুর রহমান প্রকাশ মিজান (৩০), বাকলিয়া মাস্টারবাড়ির মৃত আবু তাহেরের ছেলে ফজলুল করিম (৩৮) ও লালখানবাজার এম আলী রোডের আবদুর রহিমের ছেলে সোহেল রানা।

 

এছাড়া আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- বাকলিয়ার সৈয়দ শাহ রোডের মোজাফফরের ছেলে মোরশেদ (৪০), বাকলিয়া কালামিয়া বাজারের ফকির বাড়ির ওমান (৩৬) ও শাহিন (৪০)। এজাহারভুক্ত নয়জন ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট