চট্টগ্রাম সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চলতি সপ্তাহেই চালু হচ্ছে ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্প

মোহাম্মদ আলী

২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১:২১ অপরাহ্ণ

কমিশনিং কাজ আগেই শেষ হয়েছে। এরপর দেওয়া হয়েছে ট্রায়াল রানও। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার পালা। চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডকে দৈনিক দেড় কোটি লিটার পানি সরবরাহ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চলতি সপ্তাহে যাত্রা শুরু করবে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প। এরপর চাহিদার ভিত্তিতে ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে উৎপাদনও।

 

কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের শিল্পকারখানা ও আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহ দিতে ২০১৯ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের জুনে। কিন্তু প্রকল্পে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। শুরুতে করোনা মহামারি, এরপর পশ্চিম পটিয়া কালারপুল ব্রিজ সংলগ্ন শিকলবাহা খালের মাটির তলদেশে পানি সরবরাহ পাইপলাইনের কাজে জটিলতা নিরসন করে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হয়েছে। এটির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৬ কোটি লিটার।

 

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহম্মদ মাহবুবুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, কমিশনিং কাজ শেষ হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ট্রায়াল রানও। প্রকল্পটি চলতি সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনে যাবে। তাতে প্রথম পানি সরবরাহ পাবে সিইউএফএল। তাদের দৈনিক দেড় কোটি লিটার পানি সরবরাহ দেওয়া হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে কাফকো, কোরিয়ান ইপিজেডসহ অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও পানি সরবরাহ দেওয়া হবে। তাছাড়া আবাসিকে যারা আবেদন করেছে তাদেরও পানি দেওয়া হবে।

 

ওয়াসা সূত্র জানায়, বোয়ালখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী ও আনোয়ারায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, সরকারি ও বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কোরিয়ান ইপিজেডসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পানি সরবরাহের জন্য ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বোয়ালখালীর শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের জ্যৈষ্ঠপুরা গ্রামে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে এই প্রকল্পের জন্য পানি শোধনাগার তৈরি করা হয়। সেখান থেকে কর্ণফুলী নদীর বাম তীরে অবস্থিত শিল্পকারখানা ও আবাসিক এলাকায় চলতি সপ্তাহে পানি সরবরাহ করা হবে।

 

দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এ প্রকল্পের কাজ করেছে। প্রায় এক হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পটি দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার যৌথ অর্থায়ন করেছে। প্রকল্পটি পুরোপুরি উৎপাদনে গেলে ওয়াসার পানি সরবরাহ বাড়বে দৈনিক আরো ৬ কোটি লিটার। যা সরবরাহ হবে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে।

 

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম পূর্বকোণকে বলেন, বাণিজ্যিক গ্রাহক ছাড়াও এ প্রকল্পের অধীনে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় তিন হাজার আবাসিক গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত সংযোগের জন্য আবেদন করেছে প্রায় ২৫০০ গ্রাহক। এর মধ্যে ৭০০ গ্রাহকের বাসাবাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ থেকে ১৭ ডিসেম্বর টানা ৭২ ঘণ্টা পরীক্ষামূলক প্রকল্পের ট্রায়াল রান দেওয়া হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক হয়েছে।

 

উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রথম মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ১৯৮৭ সালে। এটির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯ কোটি লিটার। এর ২৯ বছর পর ২০১৬ সালে নভেম্বরে দ্বিতীয় প্রকল্প কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প চালু করে ওয়াসা। এটির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৪ কোটি লিটার। এরপর ২০২১ সালে মার্চে দ্বিতীয় কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পটি চালু করে ওয়াসা। এটির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৪ কোটি লিটার। এর এক বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে চালু করা হয় শেখ রাসেল পানি সরবরাহ প্রকল্পটি। এটির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯ কোটি লিটার।

 

বর্তমানে নগরে চট্টগ্রাম ওয়াসা দৈনিক পানি সরবরাহ দেয় ৪৬ থেকে ৪৭ কোটি লিটার। ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্পটি চলতি সপ্তাহে চালু হলে সরকারি সেবা সংস্থাটির দৈনিক উৎপাদন বাড়বে আরো ৬ কোটি লিটার।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট