২০২৪ সালে দেশে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের পাশাপাশি আলোচিত ছিল তাপদাহ। এছাড়া মে থেকে আগস্ট মাসজুড়ে দফায় দফায় বন্যায় আক্রান্ত হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। তবে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী হিসেবে বিবেচিত হয় আগস্ট মাসে দেশের পূর্বাঞ্চলে সংঘটিত বন্যা। বিশেষ করে ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চল আক্রান্ত হয় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায়। সব মিলিয়ে দেশে মে মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত চার মাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১ কোটি ৮৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব দুর্যোগের মধ্যে ছিল ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা।
চলতি বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় শুরু হয় মৌসুমের প্রথম দাবদাহ। এমনকি মার্চের মাঝামাঝিতে রীতিমতো দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় দাবদাহ। পরবর্তীতে এপ্রিল মাসের পুরোটা সময়জুড়ে আরেক দফা টানা দাবদাহের কবলে পড়ে দেশ। বাংলাদেশেও গরমের তীব্রতার কারণে তৈরি হয় দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসেও বিক্ষিপ্তভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে কালবৈশাখি ঝড়।
বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় বছরজুড়েই বাংলাদেশের উপক‚লীয় অঞ্চলে আঘাত হানলেও, ২০২৪ সালে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ ছিল অনেকটাই কম। এ বছর দেশের উপক‚লীয় অঞ্চলে মাত্র দুটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ছয় জেলায় প্রাণ হারান ১০ জন। ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর কয়েক মাসের বিরতিতে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে দেশের উপক‚লীয় অঞ্চলে আঘাত হানে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়। মৌসুমি বৃষ্টিপাত এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে মে মাস থেকে শুরু করে আগস্ট মাস পর্যন্ত দফায় দফায় বন্যায় আক্রান্ত হয় দেশের বিভিন্ন জেলা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় এক কোটি মানুষ।
২০২৪ এর মে মাসের শেষ সপ্তাহ ও জুন মাসে কয়েক দফা আকস্মিক বন্যার সম্মুখীন হয় সিলেট। মে মাসের শেষে ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেট জেলার ৫টি উপজেলায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে ২০২৪ সালের সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয় আগস্ট মাসের শেষ দশদিনে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে হওয়া বন্যা। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফামের দেয়া তথ্যমতে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফেনী ও নোয়াখালী জেলা। এই জেলাগুলোর ৯০ শতাংশ মানুষ বন্যায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে। ধ্বংস হয় ৪৮ শতাংশ বাড়িঘর।
মূলত ভারি বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের এগারো জেলার ৭৩টি উপজেলা। প্রলয়ঙ্করী এই বন্যায় প্রাণ হারান প্রায় ৬০ জন মানুষ। সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারান ফেনীতে।
বন্যায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কথা জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। আগস্ট মাসের বন্যায় পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির কথা জানায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি।
পূর্বকোণ/ইব