টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভীষণ শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদেরকে বলা হয় হার্ডহিটারদের দল। দু’বার জিতেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা। এমন এক দলকে তাদের মাটিতেই হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিলো বাংলাদেশ! ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ডের পর চতুর্থ দল হিসেবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করলো টাইগাররা।
সেন্ট ভিনসেন্টে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিবিয়ানদের ৮০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ মিশন পূর্ণ করেছে লিটন দাসের দল। তিন ম্যাচ সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে ৩-০ ব্যবধানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এর আগে টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ জয়ই ছিল না। এবার সে লক্ষ্য পূরণের পর প্রথমবার তাদের হোয়াইটওয়াশ করে নতুন ইতিহাস গড়লো টাইগাররা। তিন বা তার বেশি ম্যাচের সিরিজে বিদেশের মাটিতে এটি বাংলাদেশের কোন প্রতিপক্ষকে দ্বিতীয়বার হোয়াইটওয়াশ করার রেকর্ড। সবমিলিয়ে তৃতীয়বার (এর আগে আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে) টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করলো টাইগাররা।
শেষ ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে ৪১ বলে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭২ রান করেন জাকের আলি। জবাবে খেলতে নেমে ১৬ ওভার ৪ বলে ১০৯ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয় বলেই ব্রেন্ডন কিংকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই পেসার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। সিরিজের সবগুলো ম্যাচেই তাসকিনের শিকার হয়েছেন কিং।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের ০.৫ ওভার খেলার পরই হানা দেয় বৃষ্টি। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মিনিট বিশেক পরই আবার খেলা শুরু হয়। দ্বিতীয় ওভারেই স্পিন আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। নতুন বলে আরও একবার দুর্দান্ত শুরু করেন শেখ মেহেদি। নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই উইকেটের দেখা পান। তাকে লং অন দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে বদলি ফিল্ডার আফিফ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন জাস্টিন গ্রিভস। তাতে ৭ রানেই ২ উইকেট হারায় উইন্ডিজ।
এরপর নিকোলাস পুরান ও জনসন চার্লস জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। তবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে গিয়ে ফেরেন পুরান। এই অভিজ্ঞ ব্যাটারকে বোকা বানিয়েছেন মেহেদি। অফস্টাম্পের বাইরে থেকে নিচু হয়ে ভেতরে ঢোকা বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন পুরান। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০ বলে ১৫ রান।
পাঁচে নেমে চার বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই হাসান মাহমুদের বলে মেহেদির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন রোস্টন চেইস। এক প্রান্ত আগলে রাখা চার্লস ফিরেছেন রানআউটের শিকার হয়ে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৮ বলে ২৩ রান। তাতে দলীয় ফিফটির আগেই ৫ উইকেট হারায় উইন্ডিজ।
এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। লোয়ার মিডল অর্ডারে রভম্যান পাওয়েল-গুড়াকেশ মোতিরাও ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। খানিকটা ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল রোমারিও শেফার্ড। তবে তার ২৭ বলে ৩৩ রানের ইনিংস কেবলই জয়ের ব্যবধান কমিয়েছে।
বাংলাদেশের হয়ে ২১ রানে ৩ উইকেট শিকার করে ইনিংসের সেরা বোলার রিশাদ হোসেন। তাছাড়া তাসকিন ও মেহেদি দুটি করে উইকেট পেয়েছেন। আর একটি করে উইকেট পেয়েছেন তানজিম সাকিব ও হাসান মাহমুদ।
এর আগে লিটনের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নেমে রীতিমতো ঝড় তোলেন পারভেজ হোসেন ইমন। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত শুরু পায় বাংলাদেশ। অফফর্মে থাকা লিটনকেও বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। দারুণ কিছু শটও খেলেছেন। তবে ১৪ রানের বেশি করতে পারলেন না। অধিনায়ক ফেরায় ভাঙে ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি।
লিটন ফেরার পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ইমন। দুর্দান্ত ব্যাটিং করা এই ওপেনার আলজারি জোসেফকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন জাস্টিন গ্রেভসের হাতে। সাজঘরে ফেরার আগে ২১ বলে ৩৯ রান করেন তিনি। যেখানে রয়েছে ৪টি চার ও ২টি ছক্কার মার। ইমনের দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ ২ উইকেটে ৫৪ রান তোলে।
তিনে নেমে ভালো শুরুর আভাস দিলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তানজিদ তামিম। এক ছক্কায় ৯ বলে ৯ রান করেছেন এই টপঅর্ডার ব্যাটার। ৬৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যকফুটে গেলে আরেকবার দলের হাল ধরেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও জাকের আলি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে শুরুতে দু’জনে কিছুটা রক্ষণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাত খুলেছেন। আর রানের গতি বাড়াতে গিয়েই ফিরেছেন মিরাজ। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৩ বলে ২৯ রান।
এদিন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দেওয়া হয় শামিম হোসেনকে। কিন্তু গত দুই ম্যাচে দারুণ ব্যাট করলেও আজ তার ভাগ্য সহায় হয়নি। ২ রান করে জাকেরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়েছেন। একইপথে হেঁটেছেন শেখ মেহেদিও।
দুই ব্যাটারের রানআউটের সঙ্গেই ছিল জাকেরের নাম। তাই বাড়তি দায়িত্ব ছিল তার ওপর। সেটা ভালোভাবেই পুষিয়ে দিয়েছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। শুরুতে কিছুটা ধীরগতির ব্যাটিং করলেও ফিনিশিংটা করেছেন দুর্দান্ত। একপ্রান্তে রীতিমতো টর্নেডো বইয়ে দিয়ে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় ৪১ বলে করেছেন অপরাজিত ৭২ রান। জাকেরকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন তানজিম সাকিব। এক চার ও এক ছক্কায় ১২ বলে ১৭ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।
পূর্বকোণ/মাহমুদ