শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের ঢল নেমেছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়া এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকের এই উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র, সবখানে পর্যটকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
ছুটির দিন ছাড়াও আজ রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) সরজমিনে দেখা যায় সৈকতের লাবনী বিচ থেকে কলাতলী হয়ে হিমছড়ি ইনানী পর্যন্ত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার পর্যটকের কোলাহলে মুখর। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই এই সুন্দর সময় উপভোগ করতে এসেছেন।
এছাড়া রামুর শেষ প্রান্তে পেচারদ্বীপ এলাকায়ও বিভিন্ন ছোট ছোট রিসোর্টেও পর্যটকের ভিড় জমেছে। বাংলাদেশের কিংবদন্তি দ্বীপ মহেশখালীতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের ভিড় দেখা যায়।
হোটেলগুলোতে রুমের অভাব
পর্যটকদের এই ঢলের ফলে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলোতে রুমের অভাব দেখা দিয়েছে। মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত অনেক হোটেলের রুম আগেই বুকিং হয়ে গেছে। হোটেল ব্যবসায়ীরা এই অতিথি আগমনে খুশি এবং তারা মনে করছেন, এই ধরনের ভিড় মার্চ মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
কক্সবাজারে পর্যটকদের ভিড়ের সুযোগ নিয়ে কিছু হোটেল অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত অনেক হোটেলের রুম বুকিং হয়ে গেলেও, সরাসরি যোগাযোগ করলে রুম না পাওয়া গেলেও দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত দাম দিয়ে রুম বুকিং সম্ভব হচ্ছে। হোটেল মালিকরা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
হোটেল ভাড়া আকাশচুম্বী: পর্যটকদের দুর্ভোগ
কক্সবাজারে পর্যটকদের ভিড়ের সুযোগে হোটেল মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পর্যটকরা জানিয়েছেন, কক্সবাজারে হোটেল ভাড়া স্বাভাবিকের তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
সাইমন বিচ সংলগ্ন সি ক্রাউন, রামাদা এবং সাইমন হোটেলের মতো বড় হোটেলগুলোতেও এই অবস্থা। অনেক পর্যটক সরাসরি হোটেলে যোগাযোগ করেও রুম পাননি। তবে, দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত দাম দিয়ে রুম বুকিং করা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে, ৫ তারকা হোটেল রামাদায় এই ধরনের অভিযোগ বেশি শোনা গেছে।
সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের রয়েল বিচ রিসোর্ট, সি প্যালেস এবং লং বিচ হোটেলের মতো জনপ্রিয় হোটেলগুলোতেও একই অবস্থা। ঠিক একইভাবে, লাবণী পয়েন্টের হোটেল কল্লোল, মিডিয়া এবং ডায়মন্ড হোটেলেও দালালরা অতিরিক্ত দামে রুম বুকিং করিয়ে দিচ্ছে।
পর্যটকরা আরও জানিয়েছেন, খাবারের দামও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। অনেক খাবার হোটেলে খাবারের দাম দ্বিগুণের বেশি নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে অনেক সময় পর্যটকদের হয়রানিও করা হচ্ছে।
এ নিয়ে প্রশাসনসহ ভোক্তা অধিকারের উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত। তাদের দাবি খাবারের মান ও দামসহ হোটেল রুমের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি টাকা আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি আশা করেন পর্যটকেরা।
পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। সৈকতগুলোতে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম জানিয়েছেন, তারা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সৈকতে পর্যটকদের উচ্ছ্বাস যেন কোনো দুর্ঘটনার কারণ না হয়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পূর্বকোণ/এরফান/জেইউ/পারভেজ