চট্টগ্রাম সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

আমরা চাই চিন্তাশীল, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী বুদ্ধিজীবী: চবি উপাচার্য

চবি সংবাদদাতা

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১১:১৪ অপরাহ্ণ

রাজনৈতিক অধিকারের জন্য আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। বিগত সাড়ে পনেরো বছর একটা জাতিকে দমিয়ে রাখা হয়েছিল। ২৪ এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও গণআন্দোলনে দেশের আপাময় জনসাধারণ গত ৫ আগস্ট স্বৈরশাসকের পতন করে অর্জন করে নতুন বাংলাদেশ। এ স্বাধীনতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমরা পোষা বুদ্ধিজীবী চাই না। আমরা চাই চিন্তাশীল, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী বুদ্ধিজীবী। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষার্থীসহ জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানান চবি উপাচার্য।

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে (১৪ ডিসেম্বর) শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন অনুষ্ঠানে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।

 

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুস্পার্ঘ অর্পণ শেষে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যদ্বয়ের নেতৃত্বে চবি শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ চত্বর থেকে শোক র‌্যালি (মৌন মিছিল) শহিদ মিনার হয়ে প্রশাসন ভবনে এসে শেষ হয়।

 

এরপর চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে সকাল ১১টায় ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য’ শীর্যক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

চবি প্রক্টর প্রফেসর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় চবি উপাচার্য আরও বলেন, বুদ্ধিজীবীরা বাঙালি জাতির সূর্য সন্তান। এ জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের অবদান চিরস্মরণীয়। ১৯৭১ সালে ঐক্যের মাধ্যমে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অর্জিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। যত অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকুক না কেন, ঐক্যের সামনে কিছুই টিকতে পারে না। একটা দেশের জন্য ঐক্য সবচেয়ে বড় শক্তি।

 

চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, বুদ্ধিজীবী তারাই যারা তাদের দেয়া বুদ্ধি, প্রজ্ঞা ও মনন দ্বারা আগামীর বিশ্বকে স্বপ্ন দেখায়। বুদ্ধিজীবী হচ্ছে তারাই যারা বর্তমান সময়ে সমকালীন অর্থনীতি ও রাজনীতিকে পরিবর্তন করার মত চিন্তা করেন। আর তারা চিন্তা করেন বিধায় তাদেরকে সবসময় ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়তে হয়। এ সময় তিনি ১৯৭১ সালে বাঙ্গালি জাতি যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এবং লক্ষ লক্ষ পাকিস্তানী যখন বাংলাদেশ ত্যাগ করে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন সময়ে কোন আন্তর্জাতিক চক্রান্তের কারণে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে বের করতে আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন করার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।

 

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, পৃথিবীর বড় বুদ্ধিজীবী সক্রেটিস। যারা সত্য কথা বলে, ন্যায়ের কথা বলে, তারাই প্রকৃত বুদ্ধিজীবী। পাকিস্তানিরা পরিকল্পিভাবে আমাদের বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করেছে। আমাদের সম্মানিত শিক্ষকরা নিরপেক্ষতার অবস্থান হারিয়েছে। বাংলাদেশকে রক্ষার ক্ষেত্রে আজ আমরা বিভক্ত। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও গণআন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষকদেরকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। তিনি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ন্যায়ের কথা বলার আহবান জানান।

 

উল্লেখ্য, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মসজিদে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব উপাসনালয়ে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার সদগতি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। এছাড়া শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়।

 

পূর্বকোণ/জুনায়েদ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট