অগ্রহায়ণ প্রায় শেষ। কনকনে শীতে জানান দিচ্ছে পৌষের আগমনী বার্তা। কুয়াশা ভরা সকালে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে সবজি ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। কেউ ক্ষেত থেকে তুলছেন মুলা, বেগুন, ফুল-বাঁধাকপিসহ নানা শাক-সবজি। কেউ আবার ভার করে নিচ্ছেন হাট-বাজারে। আবার কোথাও দেখা যায় নতুন করে শাক-সবজি লাগানো হচ্ছে। চিরায়ত এই দৃশ্য দেখা যায় গ্রামাঞ্চলে।
কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধানের চেয়ে সবজি চাষে লাভ বেশি পাওয়ায় কৃষকেরা এখন সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। কৃষি বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, ১০ বছরে চট্টগ্রামে সবজি উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। অথচ ৭-৮ বছর আগেও উত্তরবঙ্গ থেকে এনে চট্টগ্রামের চাহিদা মিটাতে হতো। এখন এখানকার উৎপাদিত সবজি চট্টগ্রামের জোগান মিটিয়ে সরবরাহ করা হয় ঢাকা-কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রামের এবার ৩৩ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। সবজি আবাদ বাড়ানোর জন্য সরকার প্রতি বছর সহায়তা দিয়ে আসছে। চলতি মৌসুমের শুরুতে বন্যায় কৃষিতে বড় ক্ষয়-ক্ষতি হয়। সবজি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ৬৬ হাজার কৃষককে ৮ ধরনের সবজি বীজসহ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
কৃষিবিদ আবদুচ ছোবহান বলেন, কম সময়ে সবজি উৎপাদনে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বাজারে দাম ভালো থাকায় লাভ বেশি হয়। তাই চাষিরা ধান কাটার পর সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
কৃষি বিভাগ জানায়, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সীতাকুণ্ডে দুই উপজেলাকে সবজি ভাণ্ডার বলা হয়। এছাড়াও বাঁশখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, রাঙ্গুনিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে প্রচুর সবজির চাষাবাদ হয়। গ্রামাঞ্চল ছাড়াও নগরীর হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকায়ও ব্যাপক হারে সবজির চাষাবাদ করা হয়। এখানকার উৎপাদিত সবজি এখন চট্টগ্রামের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৪-১৫ মৌসুমে চট্টগ্রামে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ১৭৬ হেক্টর। চলতি মৌসুমে ৩৩ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। ১০ বছরে সবজি উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
সবজি ভাণ্ডারখ্যাত চন্দনাইশ ঘুরে দেখা যায়, শঙ্খ নদীর উভয় পাড়ে পাহাড়ি টিলা, সমতল, নদী তীরবর্তী জমিতে বেগুন, মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি, টমেটো, লাউ, শিমসহ নানা প্রকারের শাক-সবজির চাষ করা হয়েছে। পাহাড় ও শঙ্খ নদীর তীরে দুই চোখজুড়ে শুধু সবজি ক্ষেত আর সবজি ক্ষেত। কৃষক-কৃষণীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন সবজি উৎপাদন, পরিচর্যা আর সবজি উত্তোলনে। ভোরের কুয়াশা ভেদ করে কৃষকেরা উৎপাদিত সবজি আনেন দোহাজারী রেলওয়ে বাজারে। এখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদার সবজি নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন বাজারে। কারো যেন দম ফেলানোর ফুসরত নেই।
চন্দনাইশের চাষি মো. হাসান বলেন, গত বছর দুই কানি জমিতে সবজি চাষ করেছেন। এবার চার কানি জমিতে চাষ করেছে। প্রতি কানিতে সবজি রোপণে খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। আরও দুই লাখ টাকার সবজি বিক্রির আশা করছেন তিনি। একই কথা বললেন আরেক চাষি মো. মারূপ। তিনি বললেন, এবার আড়াই কানি জমিতে সবজির চাষ করেছেন। প্রতিদিন দোহাজারী বাজারে সবজি বিক্রি করেন। সবমিলে পৌনে দুই লাখ টাকার সবজি বিক্রির আশা করছেন তিনি।
কৃষকেরা আক্ষেপ করে বলেন, কৃষক পর্যায় থেকে কয়েক হাত ঘুরে শীতকালীন সবজি খুচরা বাজারে আনা হয়। কৃষক পর্যায় থেকে খুচরা বাজারে পৌঁছতে সবজির দাম দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এতে কৃষকের বড় লাভ লুটে নেয় ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা।
পূর্বকোণ/ইব