চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

পাউবো’র ৫৬২ কোটি টাকার প্রকল্প

চর জাগার গল্প শেষ, এবার কাজ শুরুর তোড়জোড়

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১:৫৪ অপরাহ্ণ

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প ১৭ মাস আগে অনুমোদন হলেও শুরু হয়নি প্রকল্পের কাজ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দুই দফায় চিঠি দিয়েও কাজে ফেরাতে পারেনি ঠিকাদারদের। চর জেগে ওঠায় নির্মাণসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি নিতে দুর্ভোগের অজুহাতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর আবদার করে গো-ধরেছেন ঠিকাদাররা। অথচ চর এলাকা হওয়ায় প্রকল্পে ১০ শতাংশ বাড়তি ব্যয় ধরা রয়েছে।

 

তবে গত শনিবার (৩০ নভেম্বর) প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম। সঙ্গে ছিলেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। এতে প্রকল্পের কাজ দেখানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়াও সরকারের বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সন্দ্বীপের মানুষ। শেষমেশ ‘চরগল্প’ বাদ দিয়ে কাজ শুরু করেছে দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-২) ড. তানজির সাইফ আহমেদ পূর্বকোণকে বলেন, জানুয়ারি ও মার্চ মাসে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চুক্তিমতে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না করায় ঠিকাদারদের দুই দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্বাস বিল্ডার্স ও খুলনা শিপইয়ার্ড নামে দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে সবাই কাজ শুরু করবেন। কারণ দুই মাস পর স্যার কাজের মান ও অগ্রগতি দেখতে আসবেন।

 

শুধু ঠিকাদাররা নন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সন্দ্বীপের চারদিকে অস্বাভাবিকভাবে চর জেগে ওঠা ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় নির্মাণসামগ্রী এবং যন্ত্রপাতি নিতে সমস্যার গল্প শুনিয়ে আসছিলেন। তবে দৈনিক পূর্বকোণ ইতোপূর্বে সরেজমিনে পরিদর্শন করে চর জাগার গালগল্প মিথ্যা প্রমাণিত করে সংবাদ করেছিল। প্রকল্পের মালামাল নেওয়ার পরিবেশ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

 

অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রতিযোগিতা ছাড়াই প্রকল্পের ঠিকাদারি পেয়েছেন আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ঠিকাদাররা। সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান মিতার ঘনিষ্ঠজনরাই কাজ পেয়েছেন। তখন বড় অঙ্কের কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। তাই প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়ানোর আবদার করে আসছিলেন ঠিকাদাররা। পাউবো দুই দফায় নোটিশ দিয়েও প্রভাবশালী ঠিকাদারদের মান ভাঙাতে পারেনি।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী অপু দেব বলেন, সমতলের চেয়ে দ্বীপ ও পাহাড়ি এলাকার প্রকল্পে ১০ শতাংশ ব্যয় বেশি ধরা হয়। এটা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা।

 

গত বৃহস্পতিবার প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে দেখেছেন পূর্বকোণ সংবাদদাতা নরোত্তম বণিক। তিনি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলনা ডক ইয়ার্ড প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। মগধরা ইউনিয়নের ছোয়াখালী ঘাটের পাশে পাথর, বালি, রডসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী জমা করেছে। শ্রমিকেরা ব্লক তৈরির কাজ করছে। বিশ্বাস বিল্ডার্সও মগধরা ইউনিয়নের কোরালীয়া খালের পাশে মাটি ভরাট ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফ বলেন, অন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাজ দৃশ্যমান হয়নি। তবে ই-ইঞ্জিনিয়ারিং ও রয়েল এসোসিয়েট সন্দ্বীপের গাছুয়া ঘাটে জেটির কাজ করছে। কয়েকদিনের মধ্যে কাজ শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এই দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

 

প্রকল্প অনুমোদনের ১৭ মাস পরও কাজ শুরু না করায় মানববন্ধন করেছেন সন্দ্বীপবাসী। এসডিআই নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান এলাকাবাসীদের নিয়ে এই মানববন্ধন করেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. বেলাল বলেন, বর্ষার আগে দক্ষিণের কাজ শেষ করতে না পারলে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে যাবে।

 

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই সন্দ্বীপ সুরক্ষায় ভাঙন প্রতিরোধে ৫৬২ কোটি ২১ লাখ টাকার প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন হয়। প্রকল্পে ১২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণ, ২টি নতুন স্লুইস গেট নির্মাণ ও ৭টি পুরনো স্লুইস গেট মেরামত করার কথা রয়েছে। ১৭ ভাগে ভাগ করে কাজের দরপত্র দেওয়া হয়।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট