চট্টগ্রাম শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

নিভৃত পল্লীতে আলো ছড়াচ্ছে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

রাঙ্গুনিয়া এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

মোহাম্মদ আলী 

৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ

পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তরে সারি সারি সবুজ পাহাড় আর অরণ্যানি এবং দক্ষিণে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক। প্রকৃতির এক নয়নাভিরাম এলাকায় অবস্থান ‘এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’টির। যেন নিভৃত পল্লীতে কারিগরি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে এ কেন্দ্রটি। এটির অবস্থান সাবেক রাষ্ট্রপ্রতি জিয়াউর রহমানের রাঙ্গুনিয়ায় প্রথম সমাধিস্থলের পাশে। 

 

এ সমাধিস্থলকে ঘিরে তৎকালীন সরকার ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত নির্মাণ করে এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল বিশিষ্ট বিশাল পাকা ভবন। এরপর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু করে ভর্তির কার্যক্রম। এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মূলত সমাজে পিছিয়ে পড়া এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের ৬ মাসের হাতে-কলমে কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাই এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। 

 

বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরুতে চারটি ট্রেডে ছাত্র ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়। ট্রেডগুলো হচ্ছে- দর্জি বিজ্ঞান ও পোশাক তৈরি, ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রনিক্স (রেডিও, টিভি এবং রেফ্রিজারেটর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ) এবং ইলেকট্রিক ওয়্যারিং ও মেরামত। এরপর ২০১৫ সালের পর শুরু হয় আরো দুটি নতুন ট্রেড। এগুলো হচ্ছে- আধুনিক কম্পিউটার ও ডিজিটাল ট্রেনিং এবং মেবাইল সার্ভিসিং। 

 

এসব প্রতিটি ট্রেডে ৬ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের জন্য ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে সব ধরনের ভাল সুযোগ-সুবিধা। দক্ষ প্রশিক্ষকের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ ছাড়াও রয়েছে আবাসিক সুবিধা। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন দেওয়া হয় তিন বেলা উন্নতমানের খাবার ও দুই বেলা নাস্তা। প্রশিক্ষণশেষে দেওয়া হয় নগদ চার হাজার টাকাও। তাছাড়া অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ভাড়া দেওয়া হয় দৈনিক ২৫ টাকা হারে এককালীন টাকা।

  

৪ দশমিক ৯ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত কারিগরি এ প্রতিষ্ঠানটি নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে একদিকে যেমন কারিগরি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে সীমাবদ্ধতায় আটকে আছে অনেকগুলো কাজ। পুরো এ প্রতিষ্ঠানে সরকারি অনুমোদিত পদ রয়েছে ১৭টি। এরমধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৫জন। অবশিষ্ট ১২টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এমনকি কিছু কিছু পদ রয়েছে, যেগুলোতে শুরু থেকেই কোনো জনবল দেওয়া হয়নি। ট্রেডের সংখ্যা অনুযায়ী দেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষকও। তাই সবগুলো ট্রেডে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাচ্ছে না। 

 

শুরু থেকে খালি নৈশপ্রহরী ও ঝাড়–দার পদে। তাতে প্রতিষ্ঠানে রাত্রিকালীন পাহারা ও বিশাল এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে। এ প্রতিষ্ঠানে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ থাকলেও নেই কোনো ইমামের পদ। মসজিদের খাদেম পদে একজন লোক কর্মরত থাকলেও ২০০৮ সালে তার মৃত্যুর পর আর কোনো লোক দেওয়া হয়নি। মসজিদের জন্য একজন ইমাম রাখা হলেও সরকারিভাবে তার কোনো বেতনের সুযোগ রাখা হয়নি। তাই বর্তমানে মসজিদের ইমামকে প্রতিষ্ঠানের আনুষাঙ্গিক খরচ থেকে সামান্য পরিমাণের সম্মানি দেওয়া হয়। 

 

সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দেখা গেছে, এ কারিগরি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশাল একটি লাইব্রেরি, হল রুম ও ডাইনিং রুম। রয়েছে বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও। একবারেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রান্না ঘর এবং সুপরিসর শিক্ষা ভবন। এতে রয়েছে শিক্ষার প্রচুর যন্ত্রপাতিও। যেগুলো দিয়ে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের খালি জায়গায় সৃষ্টি করা হয়েছে নানা ফল-ফলাদি বাগানও। যা যে কোন মানুষের সহজে দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়। 

 

এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী মো. আবদুর রহমান, মো. সাইফুল ইসলাম, জ্যাকশন ত্রিপুরা, রবীণ কিশোর ত্রিপুরা ও বিমল ত্রিপুরা দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, তারা যে লক্ষ্য নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে, সেভাবে তারা শিক্ষালাভ করার সুযোগ পাচ্ছে। আবাসন সুবিধা ছাড়াও প্রতিদিন তিনবেলা খাবার ও দুই বেলা নাস্তাও পাচ্ছে তারা।

 

জানতে চাইলে এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির উপ-তত্ত্বাবধায়ক মো. ছানা উল্লাহ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের মাঝে কারিগরি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রতিষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন চাহিদা চেয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। এছাড়াও প্রশিক্ষণশেষে প্রতিজন শিক্ষার্থীকে এককালীন ৪ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য যাতায়াত ভাড়া ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছি। একইসাথে প্রতিষ্ঠানে খালি পদে লোকবল প্রদানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।       

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট