আতশবাজির চোখ ধাঁধাঁনো আলোক ছটায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, এয়ার শোসহ দেশব্যাপী নানা উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে সোমবার (২ ডিসেম্বর) সংযুক্ত আরব আমিরাত তার ৫৩তম জাতীয় দিবস ‘ঈদ আল ইতিহাদ’ পালিত হয়েছে।
আমিরাত সৌদি আরবের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমশক্তির দেশ। বাংলাদেশে বিগত অর্থ বছরে (জুন ২০২৩-জুন ২০২৪) সর্বোচ্চ ৪.৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স গেছে সংযুক্ত আরব আমিরা থেকে। এদিক থেকে আমিরাত ও দেশটির জাতীয় দিবস এখানে বসবাসকারী ১০ লক্ষাধিক বাংলাদেশির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও তাই এদেশে বসবাসকারী তাবৎ বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমিরাতের জাতীয় দিবসের উৎসবে শরিক হয়েছেন। সাপ্তাহিক ছুটিসহ চার দিনের টানা ছুটি তাদের কাছে ছিল উৎসবের বাড়তি আকর্ষণ।
১৯৫০ এর দশকে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত মূলত ব্রিটিশ সরকারের অধীন কতগুলি অনুন্নত স্বশাসিত এলাকার সমষ্টি ছিল। খনিজ তেল শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে এগুলির দ্রুত উন্নতি ও আধুনিকায়ন ঘটে এবং ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, আজমান, উম্মুল কুয়েইন, ফুজাইরাহ রাস আল খাইমাহ বৃটিশ নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বছর ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর এই ৭টি আমিরাতের সমন্বয়ে দেশটির প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির জনক শেখ যায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠন করেন।
দেশের খনিজ তেলের বেশির ভাগ আবুধাবিতে পাওয়া যায়, ফলে এটি সাতটি আমিরাতের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী রাজ্য হিসেবে রাজধানীর স্বীকৃতি পায়। গতকাল ছিল এই আমিরাতের ফেডারেশন গঠনের বর্ষপূর্তি। দিনটি আমিরাতের জাতীয় দিবসও।
দিবসটি উপলক্ষে দেশের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন যায়েদ আল নাহিয়ানসহ অন্যান্য শাসকবর্গ ৫৫০০ কারাবন্দীকে মুক্তি দেন।
২০৩১ সালের মধ্যে দেশটি তার জিডিপি ১.৪৯ ট্রিলিয়ন দিরহাম (১ দিরহাম=৩৩.২৫ টাকা) থেকে ৩ ট্রিলিয়ন দিরহামে উন্নীত করতে ভিশন ২০৩১ বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে।
এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ এবং উন্নয়নের দিকে ফোকাসসহ আগামী ১০ বছরের জন্য দেশের ভবিষ্যত গঠনের জন্য একটি জাতীয় পরিকল্পনার প্রতিনিধিত্ব করে। এই পরিকল্পনাটি একটি বৈশ্বিক অংশীদার এবং একটি আকর্ষণীয় এবং প্রভাবশালী অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান উন্নত করতে চায়।
২০২৮ সালে ইউএই মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মধ্যবর্তী গ্রহাণু বেল্ট অন্বেষণের প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে তার আন্তঃগ্রহের মিশন চালু করবে। মহাকাশযানটি ৩.৬ বিলিয়ন-কিলোমিটার পথ পাঁচ বছরে যাত্রা করবে। ২০৩৩ সালে পৃথিবী থেকে ৫৬০ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে একটি গ্রহাণুতে এর চূড়ান্ত অবতরণ হবে। এটি আমিরাতকে একটি গ্রহাণুতে মহাকাশযান অবতরণকারী চতুর্থ দেশে পরিণত করবে।
আমিরাত হাইড্রোকার্বনের উপর নির্ভরতা কমাতে পর্যটন, রিয়েল এস্টেট এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মতো খাতে সক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ করছে, তবু তেল ও গ্যাস খাত তার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসাবে রয়ে গেছে।
বিশ্বের সবচে নিরাপদ শহরের তকমা নিয় দেশটির রাজধানী শহর আবুধাবি অসলো, বেইজিং, সিঙ্গাপুর, রিয়াদ এবং হংকং-এর মতো অন্যান্য ধনী শহরকে ছাড়িয়ে সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী অধুনা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী শহরের তালিকায় স্থান পেয়েছে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাই এক্সপোর্ট ও রি-এক্সপোর্ট বিজনেস হাব হিসেবে, ট্যুরিজমে, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় আন্তর্জাতিক বিশ্বে সেরাদের সেরা স্বীকৃতি আদায় করেছে। দেশের প্রতিটি আমিরাতও সুষম উন্নয়নে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। আমিরাতের অগ্রযাত্রা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
ইউএইর প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন যায়েদ আল নাহিয়ান জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশটির অভিবাসী নাগরিক এবং আমিরাতিদের কাছে নিজ হাতে লেখা এই হৃদয়গ্রাহী ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছেন।
এই বার্তায় শেখ মোহাম্মদ বলেছেন: ‘ইদ আল ইতিহাদ উপলক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জনগণের জন্য, আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং এর জনগণ, আমিরাতি এবং অভিবাসীদের উভয়ের জন্যই গর্বিত।’
উল্লেখ্য দেশটির জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিক নাম এখন ‘ঈদ আল ইতিহাদ’।
আপনার সংকল্পের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার প্রচেষ্টার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই জাতির জন্য আপনি যা করছেন তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, শেখ মোহাম্মদ তাঁর নোটে এভাবেই অভিবাসী সম্প্রদায় সহ আমিরাতিদের সবার দেশ গড়ায় অবদানের স্বীকৃতি দেন।
পূর্বকোণ/বাপ্পি/জেইউ/পারভেজ