আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত হত্যা মামলা দায়ের করা হয়নি। পুলিশ বলছে, মামলা দায়ের করতে তারা আলিফের পরিবারের জন্য অপেক্ষা করছেন। পরিবারের কোন সদস্য এলে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হবে। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তারে অভিযানও পরিচালনা করা হচ্ছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, এই ঘটনায় ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ জনের হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। হত্যা মামলা রুজু হলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। মামলার জন্য আলিফের পরিবারের অপেক্ষায় আছে পুলিশ। পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শনাক্তে কাজ চলছে।
ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইনজীবী আলিফের পিঠে ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের পাঁচটি গভীর ক্ষত রয়েছে। এছাড়া ছোট-বড় আঘাতের ক্ষত রয়েছে ৩০টিরও বেশি। ময়নাতদন্তে সহায়তাকারী এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের তিনটি গভীর ক্ষত আছে। তার ডান কানের একাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় উপস্থিত ছিলেন আলিফের বন্ধু আইনজীবী রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, তার শরীরের এমন কোন স্থান নেই যেখানে ক্ষত নেই। অন্তত ৩০টি ক্ষত রয়েছে শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। তাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। শরীরের ক্ষতস্থানগুলো কালো হয়ে আছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
এদিকে, গত মঙ্গলবার আদালতপাড়ায় পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- জুয়েল দাশ, আবদুল কাইয়ুম, রাজীব ভট্টাচার্য, জাহিদ হোসেন, রবি দাশ, কৌশিক চৌধুরী, রকি মুজামদার, আবির দে, রবিন দে, রুবেল দাশ। গতকাল শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ নিয়ে পুলিশের দায়ের করা তিন মামলায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৩৭-এ দাঁড়ালো।
ঘটনাস্থল এসি দত্ত লেনের নিলয় স্বজন ভবনের আশপাশের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ, মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও ও সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে আলিফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ২৫ জনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তারা হলেন- বিধান, রনব, বিশাল, বিকাশ, রাজ কাপুর, লালা, সামির, সোহেল দাশ, শিব কুমার, বিগ লাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাশ, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, চন্দন, জয়, রমিত, বুঞ্জা, লালা, ওমকার দাশ, রুবেল সাহা ও শুভ কান্তি দাস।
হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ ও দুটি ছবিতে দেখা যায়, সিলভার রঙের হেলমেট, কমলা রঙের টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা রামদা হাতে এক যুবক এবং লাল হেলমেট, ব্লু রঙের টি-শার্ট ও জিন্স পরা বটি হাতে আরেক যুবক আইনজীবী আলিফকে কোপাচ্ছেন। পুলিশ প্রথমদিন এদের একজনকে বিকাশ হিসেবে সন্দেহ করলেও আসলে তিনি চন্দন বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। অন্যজন বুঞ্জা মেথর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তে যুক্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ২৫ জনকে শনাক্ত করেছি। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। তাদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদে আনা হলে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন হবে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি তাৎক্ষণিক ঘটেছে- সেটা বের করা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার আদালতপাড়ায় পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় অদূরে রঙ্গম কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
পূর্বকোণ/মাহমুদ