যাত্রী সঙ্কটের কারণে সেন্টমার্টিন যায়নি পর্যটকবাহী জাহাজ। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাট থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার কথা ছিল কেয়ারী সিন্দবাদ নামে পর্যটকবাহী জাহাজ।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌপথে বৃহস্পতিবার থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাত্রী সঙ্কটের কারণে জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করেনি। তবে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হবে।
২৮ নভেম্বর নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় থেকে পর্যটকবাহী ৮টি জাহাজকে প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটক বহনের রুটিন নির্ধারণ করে দিয়েছে। অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যটকবাহী ৮টি জাহাজের মোট ধারণক্ষমতা ৩ হাজার ২১৯ জন।
জানা যায়, গত সোমবার জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদনের প্রেক্ষিতে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য কেয়ারি সিন্দাবাদ নামের একটি জাহাজকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়। যেটি ২৮ নভেম্বর কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাট থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার কথা ছিল। কিন্ত যাত্রী স্বল্পতায় চলাচল করেনি। তবে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রশাসন ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টরা।
চলাচলের অনুমতি পাওয়া জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদের ব্যবস্থাপক নুর মোহাম্মদ বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়ারছড়াস্থ আইডব্লিউটিএ জেটি ঘাট দিয়ে জাহাজ ছাড়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু যাত্রী সংকটের কারণে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছাড়া সম্ভব হয়নি। কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৩৫০ জন। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেন্টমার্টিন যেতে ইচ্ছুক যাত্রীর টিকেট বুকিং একশত জনও হয়নি। এতে যাত্রী সংকটের কারণে বৃহস্পতিবার জাহাজটি না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মূলত নভেম্বর মাসে রাত্রিযাপনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে পর্যটকদের অনীহা বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেহেতু ডিসেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে দ্বীপে ভ্রমণেচ্ছুক পর্যটকের সংকট থাকবে না। এ কারণে ডিসেম্বরের শুরু থেকে জাহাজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ এবং সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে আহবায়ক করা হয় কক্সবাজার সদর ও টেকনাফের ইউএনও’কে। গত মঙ্গলবার বিকালে কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে কমিটির সদস্যরাসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংগঠনের প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে উপস্থিত সকলে মন্ত্রণালয়ের সার্বিক নির্দেশনা মেনে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট হিসেবে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ আইডব্লিউটিএ জেটি ঘাট ব্যবহারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যদিও জাহাজ মালিকদের সংগঠন স্কোয়াব তা নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন।
কক্সবাজার সদরের ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনেই কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ আইডব্লিউটিএ জেটি ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সাথে কাজের সুবিধার্থে কমিটির সদস্য সংখ্যা আরও ৫ জন বাড়ানো হয়েছে। জাহাজ ছাড়ার/ এন্ট্রি পয়েন্টে শুধু বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক প্রস্ততকৃত এপস থেকে সংগ্রহকৃত ট্রাভেল পাসধারী পর্যটকদের অনুমোদিত জাহাজে ভ্রমণ করতে পারবেন। পর্যটক এবং অনুমোদিত জাহাজ কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দ্রব্যাদি পণ্য (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী) পরিবহন না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া পর্যটকগণ কোন হোটেলে অবস্থান করবেন তাও ট্রাভেল পাসের আবেদনের সময় উল্লেখ করতে হবে। নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনে ফিরে আসতে হবে। রত্রিযাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপন করা যাবে। পর্যটকের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি হবে না। দ্বীপে রাতে আলো জ্বালানো যাবেনা, শব্দ দূষণ সৃষ্টি করা যাবেনা। বারবিকিউ পার্টি করা যাবে না।
ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার’র (টুয়াক) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিন বিশ্বাস তুষার বলেন, মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটি জাহাজ ছাড়ার যে স্থানটি নির্ধারণ করেছে তাতে ভাটার সময় ডুবোচর জেগে উঠায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে। বিগত মৌসুমগুলোতে ওই ঘাট দিয়ে জাহাজ চলাচল করতে গিয়ে ডুবোচরে আটকে যাওয়া পর্যটকদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এমনকি জাহাজটি বাঁকখালী নদীর মোহনায় ডুবোচরে আটকে যাওয়ায় পর্যটকদের পুরো রাত সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় কাটাতে হয়েছে। মিয়ানমারে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে নাফ নদী দিয়ে সেন্টমার্টিনগামী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কারণে টেকনাফে শাহপরীরদ্বীপের গোলারচর পয়েন্ট দিয়ে জাহাজ ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। সার্বিক বিবেচনায় উখিয়া উপজেলার ইনানীস্থ নৌবাহিনীর জেটি ঘাটটিই জাহাজ ছাড়ার সুবিধাজনক ছিল। কিন্তু পরিবেশবিদদের আপত্তির কারণে প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না।
পূর্বকোণ/জেইউ/এএইচ