ঢাকার মাতুয়াইলের ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সোমবার দুপুর থেকে মোল্লা কলেজের সামনে চলা এ সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন।
পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেলে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় রবিবার ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। পূর্বঘোষিত সেই ‘সুপার সানডে’ কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গণ্ডগোলের মধ্যে নিরাপত্তার কারণে মাঝপথে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ওই হামলা ও লুটপাটের প্রতিবাদে সোমবার (২৫ নভেম্বর) ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচি ঘোষণা করে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ঘোষণা অনুযায়ী জড়ো হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে (ডিএমআরসি) হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আহত হয়েছেন অনেকে। কয়েকজন নিহত হওয়ার দাবিও করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, একদিন আগে ঘোষণার পরও পুলিশ কেন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিলো না। সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শত শত শিক্ষার্থী গিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালান। সেখানে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশের তেমন কোন ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাজ করছে। পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত আছেন। ডিএমপি এ দাবি করলেও কার্যত ঘটনাস্থলে গিয়ে এ বক্তব্যের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এদিকে, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর এক বিবৃতিতে জানান, সোমবার আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। তথাকথিত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ হামলায় তিনজন শিক্ষার্থী নির্মমভাবে প্রাণ হারান এবং শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ হামলায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের কিছু ছাত্র নামধারী ব্যক্তি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মদদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। হামলাকারীদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী নয়; বরং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত বলে অভিযোগ করা হয়।
আশরাফ সামীর বলেন, হামলাকারীরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, সম্পদ ও শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত মালামাল লুট করেছে। এছাড়া কলেজ ভবনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে তারা অধ্যক্ষের কার্যালয়সহ বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বারবার প্রশাসনের স্থানীয় ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতার আবেদন করলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহাবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, মারা যাওয়ার খরবটি আমি নিশ্চিত নই। তবে প্রচুর ছেলে কলেজে এসে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রের সঙ্গে পিস্তল দিয়ে গুলি চালায়। এতে অনেকেই হতাহত হয়।
অন্যদিকে, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার বিকেল ৪টায় বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকায় ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে এই হামলার সূত্রপাত হলেও সেখানে দেখা যায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্যকে। ঘটনার তিন ঘণ্টা পর সেখানে কেউ আহত অবস্থায় আছে কিনা সেটি খুঁজতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। তবে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়তে হয় যৌথবাহিনীকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার মো. ছালেহ উদ্দিন।
পূর্বকোণ/মাহমুদ