বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী রচনা ‘পথের পাঁচালী’ পর্দায় তুলে ধরেছিলেন সত্যজিৎ রায়। পর্দার দুর্গা চরিত্রটি মন জয় করে সবার। প্রাণোচ্ছ্বল হাসিমাখা দুর্গাকে এতবছর পরও মনে রেখেছেন দর্শক। মন খারাপ করা খবর হলো দুর্গা চরিত্রে রূপদানকারী উমা দাশগুপ্ত আর নেই।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে ভারতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান উমা দশগুপ্ত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন অভিনেতা-বিধায়ক চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী।
ভারতীয় একটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, কয়েক বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হন উমা দাশগুপ্ত। ক্যানসার মুক্তও হয়েছিলেন। সম্প্রতি ফের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। সেখানেই মারা যান এই অভিনেত্রী।
উমা দাশগুপ্ত ও চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী একই ভবনে বসবাস করেন। এ তথ্য উল্লেখ করে চিরঞ্জিৎ বলেন, সকালে ওনার মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তখনই জানালেন, উমাদি চলে গিয়েছেন। কয়েক বছর আগে ক্যানসার হয়েছিল তার।
১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ সিনেমায় ‘অপু’র দিদি ‘দুর্গা’ চরিত্রে অভিনয় করেন উমা দাশগুপ্ত। কিশোরী বয়েসের সেই চরিত্র পর্দায় জীবন্ত করেছিলেন তিনি। এরপর তাকে আর পর্দায় দেখা যায়নি। তবে একটি সিনেমায় অভিনয় করেই বিশ্বজোড়া খ্যাতি কুড়ান উমা। পেশাগত জীবনে তিনি শিক্ষক ছিলেন।
শৈশব থেকেই থিয়েটার করতেন অভিনেত্রী উমা দাশগুপ্ত। যে স্কুলে পড়তেন সেখানকার প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। সেই শিক্ষকের সুবাদেই সত্যজিৎ আবিষ্কার করেছিলেন পথের পাঁচালী সিনেমার ‘দুর্গা’ উমা দাশগুপ্তকে। তবে উমা দাশগুপ্তর বাবা চাননি মেয়ে রুপালি জগতে পা রাখুক, পরে সত্যজিৎ রায় নিজেই পরিবারকে রাজি করান।
গতবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে পৃথিবীর ১০০ বছরের সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায় জায়গা করে নেয় সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’। ১৯২০ থেকে ২০১০; মোট দশ দশকের সেরা সিনেমা বাছাই করে টাইম। এতে পঞ্চাশের দশকের সেরা ১০টি চলচ্চিত্রের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে জায়গা পায় ‘পথের পাঁচালী’। এক শতাব্দীর এই তালিকায় এটিই একমাত্র ভারতীয় সিনেমা।
পূর্বকোণ/এমটি