চট্টগ্রাম নগরীকে কেউ দেখেন প্রাচ্যের রাণী হিসেবে। কেউবা বাণিজ্যিক রাজধানী। এছাড়াও সিঙ্গাপুর অথবা হাল আমলে স্মার্ট সিটি হিসেবেও দেখতে আগ্রহী জনপ্রতিনিধিসহ চট্টগ্রামের নাগরিকগণ। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর নগরী চট্টগ্রামকে এতরূপে দেখতে চাওয়ার মধ্যে দোষের কিছু নেই। আছে আন্তরিকতা আর অপত্য ভালোবাসার ছাপ।
দীর্ঘদিন ধরেই আমরা দেখছি, চট্টগ্রামকে নানা রূপে দেখার জন্য সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বিভিন্ন সময়ে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। অবকাঠামো গড়ার মাধ্যমে নগরীর সৌন্দর্য বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগ তেমন জনসমর্থন পায়নি। এর বড় কারণ, এসব উদ্যোগের পেছনে ছিল বাণিজ্যিক মানসিকতা। অর্থাৎ বিভিন্ন সংস্থাকে পণ্য প্রচারের সুযোগ করে দিয়ে অনেকটা তার বিনিময়ে সৌন্দর্যবর্ধনকারী স্থাপনা গড়ে তোলা। এসব স্থাপনাও যে নান্দনিকতার বিচারে খুব বেশি কদর পেয়েছে, তাও না। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে স্থায়ী-অস্থায়ী কাঠামো গড়ে বরং নগরীকে অসুন্দর, ক্ষেত্র বিশেষে আবর্জনার ভাগাড় বানিয়েছে।
৭/৮ বছর আগেও চট্টগ্রাম নগরীর সৌন্দর্যহানি ঘটিয়ে নগরীতে বিলবোর্ডের জঞ্জাল ছেয়ে গিয়েছিল। অনিয়ন্ত্রিত বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড স্থাপন করে হাতেগোনা কয়েকটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা চট্টগ্রাম নগরীকে জিম্মি করে ফেলেছিল। দৈনিক পূর্বকোণ’র ধারাবাহিক প্রতিবেদন ও অদম্য প্রচারণায় সেই বিলবোর্ডের জঞ্জালমুক্ত হয় চট্টগ্রাম নগরী। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ভিন্ন আদলে রাজনৈতিক দলের বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড সাঁটানোর প্রবণতায় নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট হতে থাকে। আগের সরকারের আমলে ছোটখাটো নেতা-পাতি নেতারা বিভিন্ন দিবসে নানা ছুতোয় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও এলাকায় বড় বড় বাঁশের কাঠামো বানিয়ে তাতে ব্যানার লাগিয়ে রাখতো। এমনও হয়েছে ঈদ গিয়ে আরেক বছরে ঈদ এসেছে তাও সেই সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাখা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি দিয়ে বিভিন্ন দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে লাগানো ব্যানারের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যানারে লাগানো নেতার ছবি প্রদর্শন করা। অবস্থা এমন পর্যায়ে ঠেকেছিল, ছোটখাটো এই নেতাকে এলাকার মানুষই ঠিকমতো চেনেন না। অথচ তিনি তার পক্ষ থেকে জনগণকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। একটু খবর নিলেই জানা যাবে, ব্যানার লাগানো নেতা মূলত এলাকায় তার প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখানো ও আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যেই এসব ব্যানার লাগিয়ে তার নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। রাজনীতিকে পুঁজি করে অখ্যাত নেতা-কর্মীর শুভেচ্ছা জানানোর এই প্রবণতা বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার এখনই সময়। নিবেদিতপ্রাণ রাজনৈতিক নেতাদের উচিত নগরীর সৌন্দর্য উপেক্ষা করে স্থানীয় নেতা-কর্মীদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর এমন অপছন্দনীয় কাজটি থেকে তাদেরকে বিরত রাখা। স্থানীয় নেতাদের বোঝানো, কাজের মাধ্যমে জনগণের মন যোগানোর প্রতিযোগিতা করা। প্রচারসর্বস্ব এহেন শুভেচ্ছা জানানোয় জনগণের কল্যাণ আসে না। জনগণের মন জয় করা তো আরো দূরের বিষয়।
আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে, বিপুল অর্থ ব্যয়ে কাঠামো গড়ে নগরীর সৌন্দর্য বাড়ানোর পরিবর্তে বছরব্যাপী অনর্থক বড় বড় ব্যানার সাঁটানো বন্ধ হলেই নগরীর সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। পাহাড়-নদী আর সাগরবেষ্টিত চট্টগ্রাম এমনিতেই প্রকৃতির জৌলুসে ভাসছে। এটাকে ঢেকে না ফেলে উন্মুক্ত রাখা গেলে তাতেই একেবারে বিনা খরচে চট্টগ্রামের সৌন্দর্য বাড়বে।