২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। সেদিন বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় সিডর। আঘাতের সময় সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। তবে এ সময় দমকা হাওয়ার বেগ উঠেছিল ঘণ্টায় ৩০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।
সিডরের প্রভাবে উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। তীব্র ঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস পুরো উপকূল বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলের জেলাগুলো লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায়। ভেসে যায় ঘরবাড়ি, পশুপাখি আর অসংখ্য মানুষ।
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৭টা ৪০ মিনিট। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। সচেতন মানুষজন যেতে শুরু করলেন আশ্রয়কেন্দ্রে। বেশিরভাগ মানুষই রয়ে গেলেন বাড়িতে। তাদের ধারণা ছিল, কত ঝড়ই আইল গেল, এবারেও তাদের কিছু হবে না।
কিন্তু প্রকৃতি ঠিক বিপরীত আচরণ করেছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গোপসাগরের পানি যমদূতের মতো এসে মানুষগুলোকে কেড়ে নিতে শুরু করল। মাত্র ১০ মিনিটের জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের কয়েক হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পুরো এলাকা হয়ে গেল লণ্ডভণ্ড। চারদিকে ধ্বংসলীলা। লাশের পর লাশ পাওয়া যাচ্ছে। যারা বেঁচে ছিলেন তারা হয়ে রইলেন কালের সাক্ষী।
ওইদিন উপকূলের লাখ লাখ মানুষ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলেন। মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয় দক্ষিণাঞ্চলের ৩০ জেলার দুই শতাধিক উপজেলা। মানুষ অসহায়ের মতো শুধু চোখ দিয়ে দেখেছে। প্রতিরোধ করার মতো কিছুই ছিল না।
অন্যান্য ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো সেবারও হতাহত আর নিখোঁজের সংখ্যা নিয়ে বৈপরিত্য দেখা দেয় সরকারি-বেসরকারি হিসেবে। সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা বলা হয় ৩৩৬৩। অপরদিকে, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার বলে জানায় রেড ক্রিসেন্ট।
সিডর চলে গেলেও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল প্রায় দেড় মাস। বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল এক মাস। দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থারাও যোগাযোগ না থাকার কারণে সঠিক সময় ত্রাণসহ সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেনি।
আজ সেই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ১৭ বছর পূর্তি। আজও সেই দুঃসহ দিনের কথা মনে করে আঁতকে ওঠেন উপকূলবাসী। এখনও তাদের তাড়িয়ে বেড়ায় সেই ভয়াল সিডরের ভয়। যাদের সিডর প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের অনেকেই সাগরে লঘুচাপ হলেই ভীত হয়ে ওঠেন।
পূর্বকোণ/মাহমুদ