বিদেশ যাওয়ার টাকা সংগ্রহ করতে আপন ভাতিজি আফিয়া জান্নাত আরোয়াকে (৮) অপহরণ করেছিলেন হাসনাইনুল হক প্রকাশ নাঈম নামের এক যুবক। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় কক্সবাজারের ঝিলংজা ইউনিয়নের লিংক রোড থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে র্যাব।
গত রবিবার সকাল ৮টায় মাদ্রাসা যাওয়ার পথে কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর সিকদারপাড়া থেকে আরোয়াকে অপহরণ করা হয়। এই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৫।
গ্রেপ্তাররা হল- রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের অফিসেরচর সিকদার পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও অপহৃতের চাচা হাসনাইনুল হক প্রকাশ নাঈম (২৩) ও একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব দ্বীপ ফতেখাঁরকুল গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহীন (২৫)।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে র্যাব ১৫-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) দেবজিত পাল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ১০ নভেম্বর সকালে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর সিকদারপাড়া এলাকার এমদাদুল উলুম মাদ্রাসা গেটের সামনে থেকে অজ্ঞাতনামা অপহরণকারী চক্র আফিয়াকে অপহরণ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে নিয়ে যায়। পরে চক্রটি একই দিন সকাল ১১টার দিকে ভুক্তভোগীর মায়ের মোবাইল নম্বরে কল করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তাদের দাবি মত মুক্তিপণের টাকা না দিলে অপহৃত শিশুকে মানবপাচারকারীর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে দিবে অথবা খুন করে মরদেহ গুম করে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে ১১ নভেম্বর রামু থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এরপর র্যাব গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী শিশুকে উদ্ধারসহ দুই অপহরণকারীকে আটক করে। ওই সময় অপহরণকারীদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল, একটি হাত ঘড়ি, একটি এটিএম কার্ড এবং ৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, আটক ব্যক্তিরা দু’জন বন্ধু। আটক নাঈম বিদেশ যাওয়ার জন্য পরিবারের কাছে টাকা চাইলে বাসা থেকে না দেওয়ায় তিনি বন্ধু শাহীনকে নিয়ে তারই আপন ভাতিজিকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন ভুক্তভোগী মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে তুলে ঈদগাঁও এর দিকে নিয়ে যায়। এরপর ঈদগাঁও থেকে চৌফলদন্ডী এবং চৌফলদন্ডী থেকে কুতুপালং এ নিয়ে যায় ভিকটিমকে। তারপর সেখানে শাহীনের এক চাচার বাসায় অবস্থান নেন। একপর্যায়ে ভিকটিমের পরিবারে কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। এছাড়া ভিকটিমের পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি। ভিকটিমের শরীরে নকল ব্যান্ডেজ করে ছবি তুলে পাঠায় পরিবারের কাছে। যাতে ভিকটিমের পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং তাড়াতাড়ি তাদের চাহিদা মোতাবেক মুক্তিপণ দিয়ে দেয়। এরই মধ্যে ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে পুনরায় নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের লক্ষ্যে তারা কুতুপালং থেকে মেরিন ড্রাইভ রোড হয়ে কলাতলী এবং কলাতলী থেকে লিংক রোড এলাকায় আসলে র্যাবের হাতে আটক হন।
ভিকটিমসহ অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কক্সবাজার জেলার রামু থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
পূর্বকোণ/নীতিশ/জেইউ/পারভেজ