১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আজ তাঁর ৭৬তম জন্মবার্ষিকীতে পাঠকসমাজ তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে। তিনি এদেশের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক, নন্দিত নাট্যকার এবং চলচ্চিত্রকার।
হিমু ও মিসির আলীর স্রষ্টা হুমায়ূন আহমেদ জীবদ্দশায় তাঁর তুমুল জনপ্রিয়তা দেখে যাবার সৌভাগ্য হয়েছিলো। লেখালেখি ছাড়া নাটক ও সিনেমাসহ যেখানেই হাত দিয়েছেন, সাফল্য তাকে ছুঁয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন হুমায়ূন আহমেদ। ‘নন্দিত নরকে’ এবং ‘শঙ্খনীল কারাগার’ উপন্যাস দু’টি দিয়ে তার যাত্রা শুরু সাহিত্য জগতে। উপন্যাস দু’টি পাঠকপ্রিয়তা পেয়ে যায় দ্রুত। নগর কেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত ঘরে তিনি লেখক হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ নামে মুক্তিযুদ্ধের ওপর বড় ক্যানভাসের উপন্যাস রয়েছে হুমায়ূনের। এটি দিয়েছে তাকে ব্যাপক খ্যাতি।
জীবদ্দশায় দু’শতাধিক উপন্যাস লিখে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তার নতুন উপন্যাস প্রকাশিত হবার সাথে সাথে বিক্রির তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করে। ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কবি’, ‘বাদশা নামদার’ ইত্যাদি উপন্যাস বৃহত্তর পাঠকের মনকে ছুঁয়ে গেছে। তাঁকে বলা হতো কথার জাদুকর। তরুণদের মনের অলি-গলি তাঁর চেনা। তিনি সহজে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন তরুণদের আবেগ আপ্লুত গতি-প্রকৃতি। এদেশে কেবলমাত্র হুমায়ূন আহমেদের লেখা নাটকের জন্য রাজপথে মিছিল হয়েছে। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের ভাইকে যখন ফাঁসি দেয়া হবে, তখন ঢাকাসহ দেশের বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মিছিল হয়েছিলো বাকের ভাইয়ের ফাঁসি যেনো না দেয়া হয়।
এক সময়ে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনা শুরু করেন। প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’ দিয়ে জয় করে নেন সিনেমাপ্রেমীদের মন। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমাটিও এদেশের সফল সিনেমার একটি। সর্বশেষ পরিচালনা করেন ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট দু’টি জনপ্রিয় চরিত্র হলো মিসির আলী ও হিমু। হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র হিসেবে হিমুর অবস্থান প্রথমে। হিমুকে অনুসরণ করে এখনো একুশে বইমেলার সময়ে হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে ঘুরে বেড়ায় অনেক তরুণ। হিমুকে নিয়ে প্রথম লেখা উপন্যাস ‘ময়ূরাক্ষী’। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৫৫ সালে সিলেটের কিশোরী মোহন পাঠশালায় । সেখানে তিনি ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। ১৯৬৩ সালে বগুড়া জেলা স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন।
১৯৬৫ সালে তিনি এই বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। সাহিত্যের উপন্যাস শাখায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো সর্ব সাধারণ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। ১৯৯৪-এ তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক আগুনের পরশমণি মুক্তি লাভ করে। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আটটি পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া ঘেটুপুত্র কমলা চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
পূর্বকোণ/ইব