চট্টগ্রাম বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

হারলে ট্রাম্প ফলাফল মেনে নেবেন নাকি ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হবে?

এম. আবছারুল ইসলাম

৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮:১৭ অপরাহ্ণ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হবার জন্য কমপক্ষে ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজের ভোট প্রয়োজন। ইলেকটোরাল কলেজ কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়। এটি রাজনৈতিক পদ্ধতি।

 

ইলেকটোরাল কলেজের সর্বমোট সদস্য সংখ্যা ৫৩৮। যেখানে ৫০টি স্টেট এবং ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ইলেকটর নিযুক্ত হন। তাদের ভোটের সংখ্যা নিম্নরূপ- ক্যালিফোর্নিয়া-৫৪, টেক্সাস-৪০, ফ্লোরিডা-৩০, নিউ ইয়র্ক-২৮, ইলিনয়-১৯, পেনসিলভেনিয়া-১৯, ওহাইও-১৮, জর্জিয়া-১৬, মিশিগান-১৫, নর্থ কেরোলাইনা-১৫, নিউ জার্সি-১৪, ভার্জিনিয়া-১৩, ওয়াশিংটন-১২, আরিজোনা-১১, ইনডিয়ানা-১১, ম্যাসাচুসেটস-১১, টেনেসি-১১, ম্যারিল্যান্ড-১০, মিনেসোটা- ১০, মিসৌরি-১০, উইসকনসিন-১০, আলাবামা-৯, কলোরাডো-১০, সাউথ কেরোলাইনা-৯, কেন্টাকি-৮, লুইসিয়ানা-৮, কানেটিকাট-৭, ওকলাহোমা-৭, ওরেগন-৭, আরকানসা-৬, আইওয়া-৬, ক্যানসাস-৬, মিসিসিপি-৬, নেভাডা-৬, উটাহ-৬, নেব্রাস্কা-৫, নিউ মেক্সিকো-৫, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া-৪, হাওয়াই-৪, আইডাহো-৪, মেইন-৪, নিউ হ্যাম্পশায়ার-৪, রোড আইল্যান্ড-৪, আলাস্কা-৩, ডেলাওয়্যার-৩, ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া-৩, মন্টানা-৪, নর্থ ডাকোটা-৩, সাউথ ডাকোটা-৩, ভার্মন্ট-৩, ওয়াইমং-৩। সর্বমোট-৫৩৮। এখানো কয়েকটি স্টেটে ২০২৪ ইলেকটরেল কলেজে ভোটার সংখ্যার পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।

 

প্রত্যেক স্টেটের ইলেকটরদের সংখ্যা সংশ্লিষ্ট স্টেটের সিনেটর ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য সংখ্যার সমান। যেমন, নিউইয়র্কে ২ জন সিনেটর ও ২৬ জন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য প্রত্যক্ষ এবং গণভোটে নির্বচিত হন। তাই নিউইয়র্কের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটার ২৮ জন। বলা প্রয়োজন, স্টেটের আয়তন ও জনসংখ্যা নির্বিশেষে প্রত্যেক স্টেটে ২ জন সিনেটর ছয় বছর মেয়াদে নির্বাচিত হন। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য সংখ্যা স্টেটের জনসংখ্যা ও সেনসাসের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত এবং তাঁরা দু’বছর মেয়াদে গণভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

 

আমেরিকার রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধান দুটি নির্বাচনী দল, রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি। প্রত্যেক দল ইলেকটোরাল কলেজের জন্য স্ব স্ব পছন্দকৃত ইলেকটর বাছাই করে। তবে তাঁরা হবেন, আঠার বছরের ঊর্ধ্ব নিবন্ধনভুক্ত ভোটার এবং সংশ্লিষ্ট স্টেটের অধিবাসী। সিনেটর, কংগ্রেস সদস্য বা সরকারি কর্মচারী ইলেকটর হতে পারবেন না।

 

দু’শতাব্দী পূর্বে ফাউন্ডি ফাদারারা মনে করেন সমগ্র দেশব্যাপী নির্বাচন পরিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক। তবে, অনেকে যুক্তি দেখান, প্রেসিডেন্টিয়াল নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভোট অসমতা সৃষ্টি করবে এ কারণে যে, তা বৃহত্তর ও জনবহুল স্টেটগুলোকে অধিকতর ক্ষমতা প্রদান করবে। যা জনমতে সহজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে এবং স্বৈরশাসক সৃষ্টি করতে পারে বলে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শাসনতান্ত্রিক আইনে বিশেষজ্ঞ আখিল রিড আমর মনে করেন, ইলেকটোরাল কলেজ প্রতিষ্টার পেছনে আসল কারণ হচ্ছে, দক্ষিণে দাসত্বপ্রথা বজায় রাখা স্টেটগুলোতে ক্রীতদাসদের ভোটাধিকার ছিল না এবং ভোটারদের সংখ্যা (শ্বেতকায় ও ক্রীতদাস মালিক) তুলনামূলকভাবে নগণ্য। ফলে প্রত্যক্ষ গণভোটে তাদের পছন্দকৃত প্রার্থী নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা নেই।

 

আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) শুরু হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন। ৫০টি স্টেট ও ওয়াশিংটন ডিসির ভোটাররা আরও আগে থেকে ভোটদান শুরু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা আনুমানিক ১৫৩+ মিলিয়ন এবং ৫০% ইতোমধ্যেই ভোট প্রদান করেছে।

 

কোভিডের কারণে প্রতিটি স্টেটে নির্বাচন কমিশন মেইল-ইন-ব্যালট চালু করেছিল যা পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো যাবে। প্রত্যেক কাউন্টিতে ব্যালট রিসিভিং বক্সেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যা ছিল নিরাপদ ও সংরক্ষিত। মেইল-ইন-ব্যালট প্রথা এখনো চালু আছে। তবে, যে কোন রেজিস্টার্ড ভোটার কাউন্টির নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অনুরোধ জানাতে পারেন। আরো রয়েছে এবস্যান্টি ব্যালট ও বিদেশে বিভিন্ন সামরিক ঘাটিতে কর্মরত মিলিটারি ভোটিং। তাছাড়াও, নির্বাচনের দিন নির্বাচন কেন্দ্রে সরাসরি ভোট প্রদানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

সত্যি বলতে কি, ভোটারেরা সরাসরি প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছে না, তারা ভোট দিচ্ছে নিজস্ব স্টেটের ইলেকটোরাল কলেজ নির্বাচনে, যদিও ব্যালটে তাদের নাম নেই। অর্থাৎ, নির্ধারিত স্টেটে যে দল সংখ্যাগরিস্ট অর্জন করবে সেই দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সংশ্লিষ্ট স্টেটের সমস্ত ইলেকটরের ভোট পাবে। এটাকে বলা হয়, “বিজয়ী সব নেয় পদ্ধতি”। শুধু দুটি স্টেট, নেবারাস্কা ও মেইন এ ভিন্ন নিয়ম চালু রয়েছে। এ দুটো অঞ্চলে আইনসভা কনগ্রেশনাল ডিস্ট্রিকের উপর ইলেকটর বাছাইয়ের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়, যদিও নানা কারণে তা বদলে যায়।

 

চলতি বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রত্যেক ইলেকটোরাল কলেজ স্ব স্ব স্টেটের রাজধানীতে তাদের ভোট প্রদান করে আগামী চার মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন।

 

আমেরিকার ইতিহাসে পাঁচজন প্রার্থী পপুলার ভোট কম অর্জন করেও ইলেকটোরাল কলেজে বিজয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট পদ লাভ করেছেন। তারা হলেন, John Quincy Adam (1824), Rutherford B. Hayes (1876), Benjamin Harrison (1888), George W. Bush (2000) এবং Donald J. Trump (2016)।

 

আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনী প্রচারণা তুঙ্গে উঠেছে। প্রার্থীরা হচ্ছেন, ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক দল মনোনীত বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হারিস এবং রিপাবলিকান দল মনোনীত ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

 

নির্বাচনী এজেন্ডা দুইপক্ষ দুই মেরুতে। তবে, নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য (২৫%), অভিবাসন (১১%), স্বাস্থ্য-চিকিৎসা (১০%), চাকরি ও অর্থনীতি (১০%), গর্ভপাত (৮%), জলবায়ু ও পরিবেশ, (৭%), মানবাধিকার (৬%), জাতীয় নিরাপত্তা (৫%), কর ও সরকারি ব্যয় (৪%), বন্দুক (৪%), নাগরিক স্বাধীনতা (৩%), শিক্ষা (২%), অপরাধ (২%), বিদেশনীতি (২%), বিচার সংস্কার। সূত্র: statista.

 

এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছাডাও রয়েছেন, Chase Oliver-Libertarian Party, Jill Stein-Green Party, Joseph Kishore-Socialist Equality, Claudia De La Cruz-Socialism and Liberation, Robert F. Junior-Independent, Rachele Fruit-Socialist Workers Party and Randal A. Terry-US Constitution Party.

 

এদের মধ্যে জিল স্টেইন নাম অগ্রভাবে আসছে। অনেক আরব ও মুসলমান ভোটাররা তাঁকে ভোট দেবার জন্য স্থির করেছে। ফিলিস্থিনি জনগণের উপর ইজরাইলি নৃশংস হামলার উপর ডেমোক্র্যাটিক দল ও প্রেসিডেন্সিয়াল পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের ভূমিকাই তার কারণ। তারা অধিকাংশই ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্য ও সমর্থক।

 

কথা হচ্ছে, ২০১৬ সালের মত ট্রাম্প বিজয়ী হয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন, যদিও হিলারি ক্লিন্টন পপুলার ভোটে এগিয়েছিলেন। এ নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় নীতি নির্ধারকেরা কোন অক্টোবর সারপ্রাইজ দিতে পারেননি। তবে, নিঃসন্দেহে ২০২৪ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন ২০১৬ ও ২০২০ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

 

ইলেকটোরাল কলেজের ভোটেই যদি আমেকিকার প্রেসিডেন্ট-ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে ঢাকঢোল বাজিয়ে সারাদেশব্যাপী প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের প্রয়োজন কি! ইলেকটোরাল কলেজের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ২০১৬ সালে নির্বাচনের প্রাক্কালে ডোনাল ট্রাম্প ইলেকটোরাল কলেজের তীব্র সমালোচক হলেও, এ পদ্ধতির বদৌলতেই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

 

আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সমগ্র মার্কিন ভোটাররা তাদের পছন্দকৃত প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিচ্ছেন। হয়ত অনেকের মনে প্রশ্ন আসবে, ট্রাম্প জিতলে ত জিতেই গেলেন। তারপর, আবারো রচিত হবে নূতন ইতিহাস! যদি তিনি হেরে যান, তিনি কি ফলাফল মেনে নেবেন? বা ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হবে? তা জানতে আমাদের বেশীদিন অপেক্ষা করতে হবে না। তবে নিশ্চিত করা বলা যেতে পারে, নির্বাচনের ফলাফল বানচালের উদ্দেশ্যে “প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যু” বা দি ক্র্যাডল অব ডেমোক্রেসি ক্যাপিটাল হীল আক্রান্ত হবার কোন সম্ভাবনা নেই। Let’s wait and see a few more days!

 

লেখক: এম. আবছারুল ইসলাম, নিউ জার্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন