বিশ্বজুড়ে চরম উৎকণ্ঠা ও যুক্তরাষ্ট্রে টানটান উত্তেজনার মধ্যে আজ ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশটির ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আর এর মধ্যদিয়ে জানা যাবে-আমেরিকানরা কী তাদের ২৪৮ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছেন? নাকি আবারও ফিরছেন ট্রাম্পযুগে? শীর্ষ পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিশ্বের একজন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। যুদ্ধ, অর্থনৈতিক মন্দা বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কোনো আন্তর্জাতিক সংকটের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট কী ভূমিকা রাখছেন তার প্রভাব অপরিসীম। ফলাফল কী হবে তা নিয়ে সারা পৃথিবীতেই তৈরি হয় ব্যাপক আগ্রহ।
সর্বশেষ জরিপে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। প্রচারে নামার পর আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের প্রথম দিক পর্যন্ত কমলা ৪ পয়েন্টে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্প সেই ব্যবধান কমিয়ে এনেছেন। জয়-পরাজয় নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখা দোদুল্যমান ৭ রাজ্যের ভোটারদের নিয়ে করা সর্বশেষ জনমত জরিপগুলোয় দেখা যাচ্ছে, এসব অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প ও কমলার মধ্যে ব্যবধান এতই কম যে কোন প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন, তা বলা মুশকিল। ফলে আন্দাজও করা যাচ্ছে না, কোন প্রার্থীর পাল্লা ভারী। এবার দোদুল্যমান সাতটি অঙ্গরাজ্য (Swing State) হলো অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিন। মার্কিন নির্বাচনের পদ্ধতি অনুযায়ী ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ৫৩৮ ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে কোনো প্রার্থী ২৭০টি নিশ্চিত করতে পারলেই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
এরমধ্যে সাত সুইং স্টেটের ৯৩ ইলেক্টোরাল ভোটের ওপর নির্ভর করছে ট্রাম্প-কমলার ভাগ্য। এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ, পররাষ্ট্রনীতি, অভিবাসন, অর্থনীতি, গর্ভপাতের অধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তন। সম্প্রতি লেবাননে ইসরায়েলি হামলা ও ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি আক্রমণে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি নির্বাচনে বাড়তি উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংখ্যালঘু হলেও ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে চলেছে মুসলিম ও ইহুদি ভোটার। এদিকে, বিভিন্ন স্টেটে প্রায় ৭ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে মোট ২৪ কোটি ৪০ লাখ ভোট দেওয়ার যোগ্য নাগরিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে কতজন ভোট দেন, সেটা অবশ্যই দেখার বিষয়।
শুরুতে এবারের নির্বাচনের লড়াই ২০২০ সালের নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হওয়ার কথা থাকলেও গত জুলাই মাসে বাইডেন তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। পরে বাইডেন এবং তার দল ডেমোক্র্যাট পার্টি বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে মনোনয়ন দিলেই এটি কমলা-ট্রাম্প লড়াইয়ে পরিণত হয়। ৭৮ বছর বয়সী রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প এই নিয়ে পরপর তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন। তিনি একবার জিতেছেন, গতবার বাইডেনের কাছে হেরেছেন। তারপর তিনি হারের জন্য জালিয়াতির অভিযোগ করেছেন। এখনও ট্রাম্প ওই ফলাফল মেনে নেননি। তার বিরুদ্ধে মামলাও চলছে। ৫৯ বছর বয়সী কমলা হ্যারিস ডেমোক্রেটিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। হ্যারিস জিতলে আমেরিকার ২৪৮ বছরের ইতিহাসে তিনিই হবেন প্রথম নারী ও প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী প্রেসিডেন্ট।
গতবারের মত এবারও নির্বাচনের পর ফল নিয়ে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেবল ট্রাম্প হারলেই ক্যাপিটাল হিল দাঙ্গার মত সহিংস ঘটনার আশঙ্কার কথা বলেছেন ৪০ শতাংশ ভোটার। মেক এগেন গ্রেট আমেরিকা (Make Again Great America) স্লোগান নিয়ে ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ, মূল্যস্ফীতি ও কর হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করার ওপর বারবার গুরুত্ব দিয়েছেন। জ্বালানি খরচ কমিয়ে আনতে তিনি আরও তেল উৎপাদনের কথা বলছেন। সুদের হার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্প বলছেন, অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে পারলে আবাসনের চাপ কমবে। তিনি এও বলেছেন, নির্বাচনে যদি কমলা হ্যারিস জয়ী হন, তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাবে এবং তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরবে। আর আমি জয়ী হলে গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ থামাবো। কোথাও একজন আমেরিকান সৈন্য বেঘোরে প্রাণ হারাবে না।
অবৈধ অভিবাসীদের আবর্জনার সাথে তুলনা করে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ময়লার ভাগাড়। তিনি বলেছেন, (প্রেসিডেন্ট হলে) প্রথম দিনই আমি মার্কিন ইতিহাসের বৃহত্তম ‘ডিপোর্টেশন প্রোগ্রাম’ চালু করব। অপরদিকে, কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে করণীয় তালিকার শীর্ষে রয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার খরচ কমিয়ে আনা। তাঁর পরিকল্পনা হলো, ১০ কোটি কর্মরত আমেরিকানের জন্য কর ছাঁটাই করা হবে। এর পাশাপাশি আবাসন, স্বাস্থ্যসেবাসহ প্রতিদিনের জিনিসের দাম কমানো হবে। গর্ভপাতের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন হ্যারিস। গাজা ইস্যুতে কমলা হ্যারিস বলেছেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, তবে এই যুদ্ধের অবসান হওয়া উচিত। তিনি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে ‘গাজা পুনর্নির্মাণের জন্য একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের কথাও বলেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, কমলা প্রেসিডেন্ট হলে দুই বছরের মধ্যে মানচিত্র থেকে ইসরায়েলের অস্তিত্ব মুছে যাবে।
আরও যেসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু প্রাধান্য পাচ্ছে :
অর্থনীতি : ডেমোক্র্যাট দলের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে মহামারী-পরবর্তী অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত লাভ দেখা গেলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অবৈধ অভিবাসন ও পররাষ্ট্রনীতির বিশৃঙ্খলাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে। চার বছর আগে থেকে বর্তমানে নিজেদের এবং পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাকে শোচনীয় বলছেন শতকরা ৫২ শতাংশ মার্কিনি। আর অর্থনীতির ক্ষেত্রে মার্কিনিদের এই হতাশার প্রতিফলন পড়তে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যালট পেপারে, এমনটাই জানাচ্ছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ও বিশ্লেষকরা। গ্যালপের এক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসন, অর্থনৈতিক ও মূল্যস্ফীতির সমস্যার মধ্যে আছে বলে মনে করছেন নাগরিকরা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা এনে দিতে না পারলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতীতের ইতিহাসও ভালো খবর দিচ্ছে না। ট্রাম্পের আমলে করোনা মহামারিতে যখন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছিল, তখন দেশটির অর্থনৈতিক মার্কেটেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। দেশটির জাতীয় ঋণের পরিমাণ ৩৪ ট্রিলিয়নের রেকর্ড স্পর্শ করেছিল। ট্রাম্পের আমলে মার্কিন অর্থনীতি এক জটিল সন্ধিক্ষণ পার করেছে। অক্টোবরের রয়টার্স জরিপে দেখা যায়, অর্থনীতির প্রশ্নে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছে ৪৬ শতাংশ ভোটার আর কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ৩৮ শতাংশ সমর্থন।
অভিবাসন : এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে অভিবাসন ইস্যু। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে ৬.৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করেছে, যা অভিবাসন সমস্যার বিস্তৃতিকেই বোঝাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এমন বৃহত্তম অভিবাসন নিয়মিতকরণ প্রকল্প চালু করেছেন যেটি দেশের হাজার হাজার অ-নথিভুক্ত অভিবাসীকে নাগরিকত্বের দিশা দেখাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অপরদিকে, ট্রাম্প তার শাসনামলে কট্টর অভিবাসন-বিরোধী ছিলেন। এবার তিনি আরও কয়েকধাপ এগিয়ে। নির্বাচনী প্রচারকালে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমার দৃষ্টিতে অভিবাসনকে হ্যাঁ বলার সুযোগ নেই। আর এটি ২০২৪ সালের নির্বাচনে ১ নম্বর ইস্যু। অভিবাসন দেশের অর্থনীতিকে গ্রাস করছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র এখন একটি দখলকৃত দেশ। জরিপে উঠে আসছে, ট্রাম্পের এই নীতিকে সমর্থন করে ভোট দেবেন অধিকাংশ শ্বেতাঙ্গরা। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ শতাংশ মানুষ মনে করে বর্ডার ক্রসারের এই ঢেউ ঠেকাতে ট্রাম্পই সেরা। আর ৩৬ শতাংশ মানুষ মনে করে কমলা হ্যারিস সামলাতে পারবেন।
মুসলমান ভোটাররা দ্বিধাদ্বন্দ্বে : নির্বাচনে মুসলমানদের একমাত্র ইস্যু গাজায় দখলদার ইসরায়েলের আগ্রাসন। গেল বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের নির্বিচার বর্বর হামলায় গাজায় প্রাণহানি ৪৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে যার অধিকাংশ নারীশিশু। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। প্রায় ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ অবস্থানে ইসরায়েলের হামলা ও ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। আর এসব কিছুই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে। ভয়ংকর এই নির্মমতা ও মানবিক বিপর্যয়ের জন্য বাইডেন-কমলা প্রশাসনের ভূমিকার জন্য ক্ষুব্ধ আমেরিকান মুসলমানরা। অপরদিকে, ট্রাম্পের আমলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে ইসরায়েল। ২০১৮ সালে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর ও ফিলিস্তিনে প্রদত্ত সাহায্য বন্ধ করেন।
যদিও আমেরিকার জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ মুসলমান তবু এদের ভোট পেতে মরিয়া দুই প্রার্থী। বিশ্লেষকরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ চার সুইং স্টেট মিশিগান, মিনেসোটা, উইসকনসিন ও পেনসিলভানিয়ায় প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবেন মুসলিম ভোটাররা। ৩৫ লাখ মুসলমানের বেশিরভাগই থাকেন এ অঙ্গরাজ্যেগুলোতে যারা কিনা ইলেক্টোরাল কলেজের ফলও পাল্টে দিতে পারেন। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, গাজা ইস্যুতে ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে ডেমোক্র্যাটরা। গাজাবাসীর দুর্দশার জন্য সরাসরি বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করছে বিভিন্ন মুসলিম এডভোকেসি গ্রুপ। এরইমধ্যে মিশিগান, জর্জিয়া ও মিনেসোটায় কমলাবিরোধী আন্দোলন এবান্ডন হ্যারিস (Abandon Harris) হয়েছে। এবার কমলা হ্যারিস মিশিগানে প্রায় ২ লাখ আরব আমেরিকান ভোটারের সমর্থন হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্রাম্প মুসলমানদের কাছে টানতে চেষ্টা করছেন।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে যুদ্ধ থেমে যাবে একথাই বোঝাতে চাইছে রিপাবলিকান শিবির। কমলা হ্যারিসও গত কয়েকমাস মধ্যপ্রাচ্যে একটা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকরে তৎপর থাকলেও তাতে তেমন কোনো ফল আসেনি। নির্বাচনী জরিপ বলছে যে, মুসলমানদের প্রায় ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ কমলা হ্যারিসকে ভোট দেবেন। এটি ডেমোক্র্যাটদের জন্য দুঃসংবাদ। যেহেতু ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ থামাবেন সে হিসেবে কমলা হ্যারিসকে প্রত্যাখ্যানকারী মুসলিম আমেরিকানরা ট্রাম্পকে ভোট দিতে পারেন কিংবা বেছে নিতে পারেন তৃতীয় কোনো প্রার্থীকে। অনেকে আবার ভোট দেওয়ার আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছেন। দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন মুসলিম ভোটাররা।
চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ : ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় এলে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ প্রবল রূপ নেবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তিনি চীনের ওপর ৬০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের কথা প্রস্তাব করেছেন। সিএনবিসির খবর বলছে, হোয়াইট হাউজে দ্বিতীয় মেয়াদে বাণিজ্যযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার নীতি নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারেন ট্রাম্প। যদিও জো বাইডেন প্রশাসন বাণিজ্যযুদ্ধ নীতি বজায় রেখে চলেছে।বাকনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ঝিকুন ঝু মনে করেন, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তার প্রেসিডেন্সির আমলে চীনের সঙ্গে সংঘাত চলবেই এমনকি দেশটির সঙ্গে তার বাণিজ্য যুদ্ধ বেড়েও যেতে পারে। আর সেরকম হলে চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। এতে দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনা বাড়বে। তবে কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বাইডেনের নীতিই অনুসরণ করতে পারেন বলে ধারণা করছেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা।
গর্ভপাতের অধিকার : যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে যে কয়েকটি ইস্যু প্রাধান্য পাচ্ছে তারমধ্যে গর্ভপাত একটি। গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে এখনও লড়াই চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ বিতর্ক দীর্ঘদিনের। আজ একইসাথে ১০টি অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত ইস্যুতে ভোট হবে। একজন নারীর গর্ভে ভ্রূণ আসার পর কতদিন পর্যন্ত গর্ভপাত করতে পারবেন সেটি নির্ধারিত হবে এই গণভোটে। ২০২২ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ৫০ বছর আগের একটি রায় বাতিল করে দিলে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার রহিত হয়ে যায়। এতে সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে অন্যান্য ইস্যুর সাথে এটি আলোচনার কেন্দ্রে। ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে রয়েছেন। একারণে জেন-জি (GEN-Z) অর্থাৎ নতুন প্রজন্মসহ অধিকাংশ নারী ভোটার তার পক্ষে রয়েছেন। এদিকে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী মনোভাব রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের। সুপ্রিম কোর্টে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিয়োগ দেওয়া বিচারপতিরা মার্কিন নারীদের কয়েক দশক ধরে চলা গর্ভপাত অধিকারের পাল্টা রায় দেন। এতে নারী ভোটারদের অনেকে ক্ষুব্ধ।
জলবায়ু পরিবর্তন : জলবায়ু ইস্যুতে ট্রাম্প ও কমলা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প জলবায়ু নিয়ে ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি থেকে তাঁর দেশকে সরিয়ে নেন। ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে নেন। তবে, পুনরায় নির্বাচিত হলে নিজের আগের অবস্থানে ফেরার অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। অথচ চীনের পর যুক্তরাষ্ট্রই হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ। কমলার প্রচারশিবির বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা ও যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক জলবায়ু নেতৃত্বের আসনে বসাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারা। মার্কিন নির্বাচনের মাত্র ছয় দিন পর শুরু হতে যাচ্ছে ‘কপ২৯’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে সবুজ জ্বালানি সবুজ পৃথিবীতে উত্তরণের পথ বিশেষভাবে মন্থর হয়ে পড়তে পারে।
পূর্বকোণ/ইব