আইন করার দুই দশকেও বন্ধ হয়নি পলিথিন বাজারজাতকরণ। মাঝে মাঝে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বাজারের পলিথিন বিক্রির দোকানে অভিযান চালালেও পলিথিন কারখানায় অভিযান চালাতে দেখা যায়নি কখনো। নগরীতে কোথায় কয়টি পলিথিন কারখানা রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যানও নেই কোন সংস্থার কাছে। তবে বাজারে টনের পর টন পলিথিন বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।
২০২১ সালের ১৬ জুন নগরীতে পলিথিনবিরোধী ক্যাম্পেইন চালু করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। সেই সময় সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র নগরীর অবৈধ পলিথিন কারখানাগুলোর তালিকা করার উদ্যোগ নিলেও তা পরবর্তীতে কার্যকর হয়নি। এ অবস্থায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ (শুক্রবার) থেকে বাজারে পলিথিন বন্ধ হচ্ছে।
চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মনির হোসেন জানান, বাজারে পলিথিন বন্ধে সচেতনতা তৈরি করতে শুক্রবার (আজ) ও আগামীকাল প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ করা হবে। সরকারি বন্ধের দিন থাকায় এ দুইদিন অভিযান চালানো হবে না। রবিবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পলিথিন বন্ধে নগরীতে অভিযান চালাবে।
পলিথিন বন্ধে এর আগে গত ৩০ অক্টোবর পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর ও অঞ্চল কার্যালয়ের পরিচালক সোনিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক। এতে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ, নগর পুলিশের প্রতিনিধি, বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী অফিসার, মেট্রোসহ বিভিন্ন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি), মহানগর ও জেলা উপজেলাসমূহের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির প্রতিনিধি এবং ছাত্র, এনজিও প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন উদ্যোক্তা।
সভায় আজ (১ নভেম্বর) থেকে দেশব্যাপী পলিথিন/পলি প্রোপাইলিন শপিং ব্যাগের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে বলে সকল অংশীজনদেরকে অবহিত করা হয় এবং সকলের ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক ক্ষেত্রে পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাসের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও আইন অনু বিভাগ), সদস্য যুগ্ম সচিব (পরিবেশ-১ অধিশাখা), উপসচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ-১ ও ২) এবং সিনিয়র সহকারী সচিব (পরিবেশ-৩)।
এই কমিটি ১ নভেম্বর (আজ) থেকে দেশব্যাপী পরিচালিত পলিথিন বন্ধের অভিযান তদারকি করবেন। মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও প্রয়োজনে মাঠ কার্যক্রম পরিদর্শন করবেন। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরও আলাদা কমিটি গঠন করবে। এ কমিটি প্রতিদিন বিকেল ৫টার পর পরিচালিত অভিযানের তথ্য মন্ত্রণালয়ের কমিটিকে পাঠাবে। ২০০২ সালে সরকার আইন করে সাধারণ পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন হয়নি।
পলিথিনের এই অতি ব্যবহার পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পলিথিনের শপিং ব্যাগ পচনশীল নয়। পলিথিনের স্তূপ নালায় আটকে থাকায় পানি নিষ্কাশনেও বাধা তৈরি হয়। এ কারণে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর পলিথিন নিষিদ্ধের আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের ঘোষণা আসে। গত ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে এই ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। আজ থেকে কাঁচাবাজারেও নিষিদ্ধ হয় পলিথিন ব্যাগ।
পূর্বকোণ/ইব