চট্টগ্রামের পরিকল্পিত সম্প্রসারণের আপাতত আর বিকল্প নাই। এই শহরের প্রায় ৮০ ভাগ জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। তাই মূল শহরের বাইরে গিয়ে, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, পটিয়া, হাটহাজারী, রাউজানসহ নগরীর আশপাশের উপজেলাগুলোকে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় এনে সেখানে পরিকল্পিতভাবে আবাসিক এলাকা, শিল্প এলাকা, বিনোদনকেন্দ্রের মাধ্যমে তা সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। এটা ছাড়া আগামীর জনসংখ্যার চাপ যদি শহরের মধ্যে পড়ে, তাহলে চট্টগ্রাম আর বসবাসের যোগ্য থাকবে না।
আজ বিশ্ব নগর দিবস উপলক্ষ্যে দৈনিক পূর্বকোণের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক বোর্ড সদস্য এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান স্থপতি আশিক ইমরান এ অভিমত ব্যক্ত করেন এবং উদ্যোগের তাগিদ দেন। মানুষ শহরমুখী হওয়ার কারণ উল্লেখ করে আশিক ইমরান বলেন, বর্তমান বিশে^ নগরকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন বলা হয়ে থাকে। যেহেতু মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে, এজন্য গ্রাম থেকে ব্যাপকহারে মানুষ শহরে স্থানান্তরিত হচ্ছে। উন্নত বাসস্থান, ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা সুবিধার জন্য মানুষ মূলত শহরমুখী হচ্ছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত শহরগুলোর উপর চাপ বাড়ছে। চট্টগ্রাম শহরও এর ব্যতিক্রম নয়।
যেহেতু শিল্পায়ন হচ্ছে, তাই শহরে জনসংখ্যা বাড়ছে। তাই শহরগুলোকে বসবাসযোগ্য রাখার জন্য চসিক, সিডিএ, স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদসহ সবগুলো স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে একত্রে কাজ করতে হবে। কিভাবে বসবাসের উপযোগী রাখা যায় এবং কিভাবে পর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায়, সেভাবে কাজ করতে হবে। চট্টগ্রাম শহরে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত লোক বসবাস করছে উল্লেখ করে স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, আমরা এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করছি। বিভিন্ন দেশ ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তাদের শহরগুলোকে নতুনভাবে সাজানো এবং ব্যবহারের উপযোগী করার চেষ্টা করছে।
চট্টগ্রাম শহরের ধারণ ক্ষমতার তুলনায় অনেক গুণ বেশি মানুষ এই শহরে বাস করে। যার কারণে হয়তো আদর্শ শহর হয়তো আমরা পাবো না। এই ৭০ লক্ষ মানুষের যে চাপ, তা পুরোটাই রিসোর্সের উপর যাচ্ছে। যার কারণে পানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য যে নাগরিক সুবিধা এবং বিশেষ করে গণপরিবহনের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে শহরটা অনেকটা অচল। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ ভাগ মানুষ শহরে বসবাস করবে জানিয়ে এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক লোক শহরে বাস করছে।
আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ ভাগ মানুষ শহরে বাস করবে। তাই শহর নিয়ে এখন থেকে ভাবতে হবে এবং পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ এই সমস্যা সমাধানের জন্য যেই ব্যবস্থাগুলো নিচ্ছে আমাদের সেভাবে আগানো উচিত। না হয়, এই শহর এক সময় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এই ব্যবস্থার একটি নতুন ধারণা হচ্ছে স্মার্ট সিটি। স্মার্ট সিটি বলতে বুঝায় মানুষের কোয়ালিটি অব লাইফ ইম্প্রুভ করা। গণপরিবহন নিশ্চিত করা। বিদ্যুৎ, পানি এবং সুলভ আবাসন নিশ্চিত করা।
চট্টগ্রাম শহর অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠার কারণ উল্লেখ করে আশিক ইমরান বলেন, আমাদের সিডিএ বলি, সিটি কর্পোরেশন বলি, তারা এই শহরটাকে পরিকল্পনা মাফিক গড়ে তুলেনি। এর দায়ভার সিডিএ, সিটি কর্পোরেশনের যেমন আছে, নাগরিক হিসেবে আমাদেরও রয়েছে। আইন না মানার সংস্কৃতিতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যার কারণে অপরিকল্পিতভাবে অনেকগুলো ভবন নির্মাণ হয়েছে, সড়ক সংকুচিত হয়ে গেছে, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। সবকিছু মিলে আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি।
খাতুনগঞ্জের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যানবাহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে। কিন্তু এই খাতুনগঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা প্রাণকেন্দ্র। রি-ডেভেলপমেন্ট একটি কনসেপ্ট এসেছে। এই ধরণের অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা এলাকাগুলোকে পর্যাপ্ত রাস্তাঘাট, সবুজ, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে নতুনভাবে ডিজাইন করে সাজানো। যেহেতু আমাদের জনসংখ্যা আরো বাড়বে। এটাকে মাথায় রেখে আমাদের কাজগুলো করতে হবে।
পূর্বকোণ/ইব