মামলার নথিতে ক্রমিক ও পরবর্তী শুনানির ধার্য তারিখ নেই। নেই হালনাগাদ তথ্য। অনেক মামলার সঙ্গে সিডিও (কেস ডকেট) নেই। এক মামলার সিডি পাওয়া যাচ্ছে অন্য মামলায়। এসব কারণে মামলার নথি নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি আইন কর্মকর্তা (পিপি)। বিষয়টি চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর। এ ট্রাইব্যুনালে পিপি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শফিউল মোরশেদ চৌধুরী। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামে ৩৪৬ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। ২০ অক্টোবর তিনি ট্রাইব্যুনালে পিপির দায়িত্ব পান।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া দুজন পিপি। তারা হলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম ও অ্যাডভোকেট এম এ নাসের চৌধুরী। সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন পিপির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন পিপি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বিদায়ী পিপি রাষ্ট্রের সব মামলার নথি নতুন পিপিকে বুঝিয়ে দেবেন। তারা মামলার একটা তালিকা দেবেন। তালিকার ক্রম অনুসারে প্রতিটি মামলার নথির ওপর বিদায়ী পিপি আলাদা কাগজ লাগিয়ে ক্রমিক এবং ক্রমিকের সঙ্গে মামলার নাম্বার থাকবে। সবগুলো মামলার তালিকায় থাকা ক্রমিক ধরে নতুন পিপিকে বিদায়ী পিপি তা বুঝিয়ে দেবেন। থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর সিডিও প্রতিটা মামলার সঙ্গে যুক্ত করে দেবেন। এছাড়া তালিকায় ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হওয়া মামলা আলাদাভাবে সাজানো থাকবে। কারণ নিষ্পত্তি হওয়া মামলা আপিলে বা রিভিশনে গেলে সে বিষয়েও পিপিকে পদক্ষেপ নিতে হয়। এছাড়া চলমান মামলার নথিও আলাদা তালিকা থাকবে।
সূত্র জানায়, এ ট্রাইব্যুনালের অধিক্ষেত্রে রয়েছে নগরের পাঁচলাইশ, সদরঘাট, পতেঙ্গা এবং জেলার ভুজপুর ও জোরারগঞ্জ থানা। ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল চট্টগ্রামে ট্রাইব্যুনালটি গঠিত হয়। ২০১৯ সালে তৎকালীন সরকার এ ট্রাইব্যুনালে খন্দকার আরিফুল আলমকে পিপি নিয়োগ দেন। পরে ২০২৩ সালে একই ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ পান এম এ নাসের চৌধুরী। জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী পূর্বকোণকে বলেন, ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এক হাজার মামলা হয়েছে। যার মধ্যে নিষ্পত্তিকৃত ৪২৫ ও বিচারাধীন রয়েছে ৫৭৫ মামলা। বিচারাধীন মামলার মধ্যে থানায় হওয়া মামলার সংখ্যা তিন শতাধিক। বাকিগুলো সরাসরি ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট একজন জানান, থানায় হওয়া প্রায় সব মামলার সিডির নথি পাওয়া যাচ্ছে অন্য মামলায়। যার মধ্যে শিশু আদালতের মামলাও রয়েছে।
জানতে চাইলে নতুন পিপি শফিউল মোরশেদ চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, মামলার সিরিয়াল ছাড়া, ধার্য তারিখ কবে এসবের তালিকা ছাড়াই আমাকে মামলার নথি দিয়ে গেছেন সাবেক পিপি আরিফ। সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট এম এ নাসির চৌধুরী কোন নথি বুঝিয়ে দেননি। তিনি আরও বলেন, সিডি ছাড়া মামলা পরিচালনায় চরম অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে সিডি না থাকায় বা ভুল নথিতে সিডি যুক্ত হওয়ায় সাক্ষ্য প্রদান ও আদালতে প্রদর্শনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছে না । এসব কাগজ বা দালিলিক প্রমাণ সিডিতে সংযুক্ত থাকে। জানতে চাইলে সাবেক পিপি খন্দকার আরিফুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, আমি সব মামলার নথি ও সিডি বর্তমান পিপিকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তবে নিষ্পত্তি হওয়া ও অনিষ্পত্তিকৃত মামলা আলাদা করে দিইনি। তিনি আরও বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতা বুঝতে হবে। আমরা এত নথি কোথায় রাখব। আমাদের মামলার নথি সংরক্ষণের জন্য কোন স্থান বা কক্ষ বরাদ্দ দেয়নি।
মামলার হাল নাগাদ তথ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, মামলার পরবর্তী তারিখ বা অবস্থান আদালতের বেঞ্চ সহকারী দুই ঘণ্টায় কম্পিউটার থেকে বের করে দিতে পারেন। পাল্টা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ অনেক সময় আমাদেরও মিসিং হয়েছে। জানতে চাইলে সাবেক পিপি এম এ নাসের চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, আমার দায়িত্বে মাত্র কয়েকটি মামলা ছিল। মামলার সংখ্যা ১৫-১৬টি। আমি নথিগুলো ট্রাইব্যুনালের পেশকারকে দিয়ে এসেছি। তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালের প্রায় সব মামলার দায়িত্বে ছিলেন খন্দকার আরিফুল আলম।
এদিকে এ ট্রাইব্যুনালের পিপির জন্য কোন সরকারি চেম্বার না থাকায় মামলার নথিগুলো আদালত কক্ষের দেয়ালের সঙ্গে স্তূপ করে রাখতে দেখা গেছে।
পূর্বকোণ/ইব