ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা ইরানে “সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর” হামলা চালিয়েছে। একই সময়ে ইরানের গণমাধ্যম জানায়, তেহরানে এবং তার কাছে কারাজ শহরে শনিবার ভোরে কয়েকটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা গেছে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেয়া এক পোস্টে বলে, তারা ইরানে “সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর সুনির্দিষ্ট হামলা” চালাচ্ছে। তবে তারা বিস্তারিত কিছু বলেনি।
ইসরায়েলি বিবৃতিতে বলা হয়, গত বছর ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইরানি সরকার এবং তাদের মিত্ররা ইসরায়েলের উপর সাতটি রণাঙ্গনে বিরামহীন হামলা চালিয়ে আসছে, “যার মধ্যে রয়েছে ইরান থেকে সরাসরি হামলা।”
“বিশ্বের অন্য সব সার্বভৌম দেশের মত, ইসরায়েলেরও অধিকার এবং দায়িত্ব রয়েছে জবাব দেবার,” বিবৃতিতে বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের হামলা হচ্ছে এমন সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন তাঁর সর্বশেষ মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন।
ভয়েস অফ আমেরিকা জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্রর কাছে জানতে চায়, ইরানে বিস্ফোরণ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অবহিত করা হয়েছে কিনা। মুখপাত্র শন সাভেট সরাসরি জবাব দেননি, তবে তিনি আক্রমণের কথা নিশ্চিত করেন।
“আমরা জানি যে ইসরায়েল আত্মরক্ষার স্বার্থে ইরানে সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলা চালাচ্ছে। এই হামলা ছিল ১ অক্টোবর ইসরায়েলের উপর ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে,” সাভেট বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রতিরক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, আক্রমণের ব্যাপারে “আমাদের আগে জানানো হয়েছিল, তবে আমরা জড়িত ছিলাম না।”
যুক্তরাষ্ট্রের আরেকজন প্রতিরক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তা ভিওএকে বলেন, পেন্টাগন যুক্তরাষ্ট্রের যে সকল অতিরিক্ত সামরিক বাহিনী এবং সরঞ্জাম মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়েছিল, সেগুলো ইরানের উপর ইসরায়েলের আক্রমণের আগেই ঐ অঞ্চলে পৌঁছায়।
শুক্রবার আগের দিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড, যারা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর তদারকি করে, তারা জার্মানি থেকে অতিরিক্ত এফ-১৬ জঙ্গি বিমানের আগমনের কথা ঘোষণা করে।
অক্টোবর মাসের ১ তারিখে ইসরায়েলের উপর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকে গোটা অঞ্চল ইসরায়েলের জবাবের জন্য অপেক্ষা করছিল।
ইরানের হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন যে ইরানি নেতারা “বড় ভুল” করেছে, এবং হুঁশিয়ারি দেন যে তাদের “মূল্য দিতে হবে।”
ইরানের হুঁশিয়ারি
ইরানের অক্টোবর আক্রমণে ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়, যা ছিল ইরান থেকে ইসরায়েলর উপর সবচেয়ে বড় হামলা। এটা ছিল ছয় মাসে ইসরায়েলের উপর ইরানের দ্বিতীয় সরাসরি হামলা।
এর আগে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কূটনৈতিক ভবনে ইসরায়েলি হামলার জবাবে তেহরান এপ্রিল মাসে ইসরায়েলের উপর ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায়।
ইরানি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলকে হামলা চালানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার করেছে, এবং বলেছে যেকোন আক্রমণের জবাবে ইরান আরও শক্তিশালী হামলা চালাবে।
শনিবার সকালে ইরানের রাজধানী কয়েকটি বড় বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায় বলে ইরানের আধা-সরকারী গণমাধ্যম জানায়, তবে তারা বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে কিছু বলেনি।
তেহরানে প্রত্যক্ষদর্শীরা বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনার কথা নিশ্চিত করেন।
“এটা এত জোড়ে হয়েছিল যে আকাশ লাল হয়ে যায়,” তেহরানে এক ইরানি বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান।