১৯৬০-এর দশকের জনপ্রিয় টেলিভিশন শো ‘টারজান’-এর নাম ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত মার্কিন অভিনেতা রন এলি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
অভিনেতার মেয়ে কারস্টেন ক্যাসাল এলি ইনস্টাগ্রামে বাবার মৃত্যু সংবাদ দিয়ে লিখেছেন, ‘পৃথিবী একজন মহান ব্যক্তিকে হারিয়েছে—আর আমি হারিয়েছি আমার বাবাকে।’
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারার লস আলামোসে নিজ বাড়িতে মারা যান রন এলি।
বুধবার ইনস্টাগ্রামে এই অভিনেতার মৃত্যুর ঘোষণা দিয়ে তার মেয়ে লিখেছেন, ‘আমার বাবা ছিলেন এমন একজন, যাকে মানুষ হিরো বলত। তিনি ছিলেন একাধারে অভিনেতা, লেখক, প্রশিক্ষক, মেন্টর, পরিবার অন্তঃপ্রাণ মানুষ এবং নেতা।’
রন এলির জন্ম ১৯৩৮ সালে, টেক্সাসে। ১৯৫৯ সালে তিনি স্কুলজীবনের প্রেমিকা জেন ট্রিপলেটকে বিয়ে করেন। তবে দুই বছর পর তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে ১৯৮০-র দশকে মিস আমেরিকা প্রতিযোগিতার উপস্থাপনার সময় ভ্যালেরির সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তারা তিন সন্তানের বাবা-মা।
১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে সিটকম ‘ফাদার নোজ বেস্ট’, ‘হাউ টু ম্যারি আ মিলিয়নেয়ার’ ও ‘দ্য মেনি লাভস অভ ডোবি গিলিস’-এর মতো জনপ্রিয় টিভি শোগুলোতে নির্ভরযোগ্য সহঅভিনেতা হিসেবে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন এলি। এরপর ১৯৬৬ সালে ‘টারজান’-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান।
১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত এনবিসি টেলিভিশনে দুই মৌসুমে ‘টারজান’-এর ৫৭টি এপিসোড সম্প্রচারিত হয়। এতে আধুনিক দর্শকদের জন্য এক নতুন ‘টারজান’ চরিত্রকে তুলে ধরা হয়।
এলি তার প্রায় সব স্টান্ট নিজেই করতেন। তা করতে গিয়ে দুবার তার কাঁধের হাড় ভেঙেছে, পিঠের পেশি ছিঁড়েছে, এবং দুবার সিংহের কামড় খেয়েছেন।
২০১৩ সালে সাক্ষাৎকারে এলি বলেছিলেন, শরীরের প্রতিটি অংশে তিনি আঘাত পেয়েছিলেন। এখনও তাকে ধাপে ধাপে বিছানা থেকে উঠতে হয়—একবারে উঠতে পারেন না।
তবে ‘টারজান’ই এলিকে বিখ্যাত করে তুলেছিল। এতটাই বিখ্যাত করেছিল যে পরে তিনি বলেছিলেন, ‘এই চরিত্রটি এমন একটি ফাঁদ, যেখান থেকে কেউই মুক্তি পায় না।’ এই চরিত্রের সঙ্গে তিনি এতটাই মিশে গিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রে তার অন্য চরিত্রে কাজ পেতে সমস্যা হয়ে যায়। এ কারণে তিনি কাজের জন্য ইউরোপে চলে যান।
১৯৭৫ সালে এলি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র ‘ডক স্যাভেজ: দ্য ম্যান অব ব্রোঞ্জ’-এ নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
এরপর তিনি টেলিভিশনে ফিরে যান। ১৯৭০ থেকে ১৯৯০-এর দশকের মধ্যে বিভিন্ন জনপ্রিয় শোতে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন। এসবের মধ্যে ছিল ‘দ্য লাভ বোট’, ‘মার্কাস ওয়েলবি’, ‘এম.ডি.’, ‘ফ্যান্টাসি আইল্যান্ড’, ‘ওয়ান্ডার উম্যান’ ও ‘হকআই’।
১৯৮০ ও ১৯৮১ সালে সুন্দরী প্রতিযোগিতা ‘মিস আমেরিকা’ উপস্থাপনা করেন রন এলি। ১৯৮০ সালে দুটি সিজনে ‘ফেস দ্য মিউজিক’ গেম শো সঞ্চালনাও করেন।
১৯৯০-এর দশকে তিন সন্তানের দেখাশোনার জন্য তিনি অভিনয় থেকে বিরতি নেন। ওই সময়ে তিনি দুটি গোয়েন্দা উপন্যাস লেখেন—’নাইট শ্যাডোজ’ (১৯৯৪) ও ‘ইস্ট বিচ’ (১৯৯৫)।
সন্তানরা বড় হওয়ার পর ২০১৪ সালে একবার তিনি টেলিভিশন মুভি ‘এক্সপেক্টিং অ্যামিশ’ দিয়ে পর্দায় ফেরেন।
২০১৯ সালে রন এলির জীবন মর্মান্তিক মোড় নেয়। ওই বছরের অক্টোবরে তার ছেলে ছুরিকাঘাতে এলির স্ত্রীকে হত্যা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তার ছেলে ক্যামেরনকে গুলি করে হত্যা করে।
আমারিলোতে জন্ম নেওয়া রোনাল্ড পিয়ার্স এলির বাবা ভার্নন ছিলেন একজন কৃষক ও স্বেচ্ছাসেবী শেরিফ। তার মা সিবিল ছিলেন স্থানীয় সরকারে কর্মরত টাইপিস্ট ও রেকর্ডার।
রন হাইস্কুলে বক্তৃতা ও অভিনয় ক্লাসে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। রাজ্য পর্যায়ে একটি কবিতা পাঠ প্রতিযোগিতায় জয়লাভের পর তিনি টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়, অস্টিনে বৃত্তি পান।
রন এলি প্রথমে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার কথা ভেবেছিলেন। তবে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তাকে হলিউডে টেনে নিয়ে যায়।
টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের পর ১৯৫৮ সালের ‘সাউথ প্যাসিফিক’ সিনেমায় একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান রন। এর মাধ্যমে তার বড় বড় চরিত্র পাওয়ার পথ খুলে যায়।
তবে তবে তার কাছে টিভি পর্দাকেই সবসময় বেশি নির্ভরযোগ্য ও আকর্ষণীয় মনে হতো। অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার শো-র জন্যই তিনি বেশি জনপ্রিয়তা পান। মারা গেছেন ‘টারজান’ তারকা রন এলি।
পূর্বকোণ/পিআর