চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪

‘ওয়াসার’ ধনে পোদ্দারি ইউসুফের

মোহাম্মদ আলী

২২ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে ওয়াসার জায়গায় অবৈধ দোকান নির্মাণের কাজ। ‘দি ওয়াসা এমপ্লয়িজ কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের’ ব্যানারে আগে ওয়াসার গুটিকয়েক কর্মচারী এসব অবৈধ দোকান নির্মাণে জড়িত থাকলেও এখন ওইকাজে নতুন করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি নিজেকে ওই সংগঠনটির বর্তমানে নতুন সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিবিএ ও নন সিবিএ সংগঠনের বাইরে ‘দি ওয়াসা এমপ্লয়িজ কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামে চট্টগ্রাম ওয়াসার আরো একটি সংগঠন রয়েছে। যার রেজিস্টেশন নম্বর ৩১৮। ২০২৩ সালের শুরুতে এ সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ওয়াসার কর্মচারী রেজওয়ান হোসেন দুলাল ও মোহাম্মদ জাকারিয়ার নেতৃত্বে গুটিকয়েক কর্মচারী চান্দগাঁও থানাধীন খাজা রোডের খালাসি পুকুর পাড় এলাকায় ওয়াসার ১৬নং পাম্পহাউজের জায়গা দখল করে পাকা দোকান ঘর নির্মাণ শুরু করে। সেখানে তারা ৭টি দোকান ঘর নির্মাণ করে। এরপর দরজায় শাটার লাগানো থেকে শুরু করে দোকানের সব ধরনের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলে। পরে প্রতিটি দোকানের জন্য নেওয়া হয় অগ্রিম সেলামিও।

 

এ নিয়ে দৈনিক পূর্বকোণে একাধিক সংবাদ পরিবেশন করা হলে থেমে যায় দোকান চালুর প্রক্রিয়া। এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর কোণঠাসা হয়ে পড়েন একসময়ে ওয়াসার প্রতাপশালী কর্মচারী রেজওয়ান হোসেন দুলাল, মোহাম্মদ জাকারিয়া, রুহুল আমিন, মোহাম্মদ এসকান্দর, জমির খান মিয়াজী, আব্দুল মোমিন সরকারসহ আরো অনেকে। পরবর্তীতে এদের কয়েকজনকে বদলিও করে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। তাতে ঝিমিয়ে পড়ে ‘দি ওয়াসা এমপ্লয়িজ কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে’র সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড।

 

এ অবস্থায় কো-অপারেটিভের হাল ধরেন ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি ওয়াসার কালুরঘাট আয়রণ রিমুভ্যাল প্ল্যান্ট এন্ড বুস্টারের নির্বাহী প্রকৌশলী। এর বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন মোহরা পানি শোধনাগারের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবেও। নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফের আগে ওয়াসার জায়গায় অবৈধ দোকান নির্মাণকারীদের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারই আলোকে গত ২০ অক্টোবর সকালে পাঁচ থেকে ছয়জন নির্মাণ শ্রমিক খাজা রোডের খালাসি পুকুর পাড় এলাকায় ওয়াসার ১৬নং পাম্পহাউজের জায়গায় পাকা দোকান ঘর নির্মাণের অবশিষ্ট কাজ শুরু করতে গেলে স্থানীয় লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তাতে অবস্থা বেগতিক দেখে নির্মাণ শ্রমিকরা সরে পড়েন।

 

এদিকে ওয়াসার ১৬নং পাম্পহাউজের জায়গায় অবৈধভাবে পাকা দোকান ঘর নির্মাণের খবর পেয়ে গত ২০ অক্টোবর সকালে ঘটনাস্থলে যান ওয়াসার মড-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রানা চৌধুরী। তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নিতে ওইদিনই ওয়াসার সম্পত্তি কর্মকর্তাকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, ওয়াসার ১৬নং পাম্পহাউজের (বলির হাট) জায়গায় পাম্প স্টেশনের এইচটি বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং ট্রান্সফর্মারের পোল ঘেঁষে বিপদজনকভাবে অবৈধভাবে দোকান ঘর নির্মাণের কারণে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় গত ২০ অক্টোবর সকালে একই জায়গায় বহিরাগত লোকজন পুনরায় দোকানের কাজ করতে আসে। তাই ঘটনাটি সুষ্ঠুভাবে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পাম্প স্টেশনের বৈদ্যুতিক সংযোগ ঝুঁকিমুক্ত করতে ওয়াসার সম্পত্তি শাখাকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

 

ওয়াসার এস্টেট অফিসার মো. বাবুল আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘ওয়াসার ১৬ নং পাম্পহাইজের জায়গায় দোকান ঘর নির্মাণের জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘ওখানে ৭টি দোকানের মধ্যে কে বা কারা ৫টির দরজার স্প্রিং খুলে নিয়ে গেছে। অপর একটির তালা ভেঙে কিছু কতিপয় যুবক সন্ধ্যায় ইয়াবা সেবন করে। মূলত দোকানের স্প্রিং এবং তালা লাগাতে শ্রমিকরা ওখানে গিয়েছিল। আগের কমিটি অবৈধভাবে এসব দোকান নির্মাণ করেছিল। ওয়াসা থেকে অনুমোদন নিয়ে আমি এসব দোকান বৈধ করার চেষ্টা করছি। কিছুদিন আগে এ সংগঠনের সভায় ১২জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় আগের সভাপতি রেজওয়ান হোসেন দুলাল পদত্যাগ করলে সভাপতি হিসেবে আমাকে কোঅপ্ট করা হয়।’ ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘অবৈধ দোকান নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ দোকানগুলো ভেঙে ফেলা হবে।’

 

এদিকে খাজা রোডে ওয়াসার ১৬ নং পাম্পহাউজে ভূমি প্রদানকারী আলী আহমদ এর নাতি নুরুল আজিম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘১৯৬৫ সালে আমার দাদা পাম্পহাউজ নির্মাণের জন্য ওয়াসাকে ২৪ শতক জমি দান করেন। কিন্তু বর্তমানে পাম্পহাউজের আড়ালে সেখানে পাকা দোকান তৈরি করা হচ্ছে। আমার দাদা জমি দান করেছিলেন ওয়াসার পাম্পহাউজের জন্য, ওয়াসার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর ব্যবসার জন্য নয়। তাই পাম্পহাইজের বাইরে অবশিষ্ট জমি ফেরত চেয়ে আদালতে মামলা করেছি।’

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট