চট্টগ্রাম সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

স্যুয়ারেজ প্রকল্পে তিন চ্যালেঞ্জ

মোহাম্মদ আলী

১৭ অক্টোবর, ২০২৪ | ১২:২৩ অপরাহ্ণ

তিন চ্যালেঞ্জে থমকে যাওয়ার শঙ্কা চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ (পয়োনিষ্কাশন) প্রকল্প। চাহিদা অনুযায়ী সরকার থেকে অর্থ বরাদ্দ না দেওয়া, প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব সম্বলিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদনে বিলম্ব এবং প্রকল্পের অধীনে ৬ থেকে ১৪ মিটার গভীরে পয়োপাইপলাইন বসানোর ক্ষেত্রে নিম্নাঞ্চলে মাটির অবস্থা ভালো না হওয়ায় নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তাতে কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য চলতি অর্থ বছরে ওয়াসা থেকে চাহিদা দেওয়া হয়েছিল ১৩০০ কোটি টাকা। কিন্তু বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ৫৪৮ কোটি টাকা। যা চাহিদার মাত্র ৪২ শতাংশ। এ কারণে কাজের স্বাভাবিক গতি ঠিক রাখার পরিকল্পনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

ওয়াসা সূত্র জানায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ দেশ সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ ৫৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। বর্তমানে দুইভাগে চলছে প্রকল্পের কাজ। একটি হচ্ছে পাইপলাইন বসানো এবং অপরটি হালিশহরে ট্রিটমেন্ট নির্মাণ। প্রকল্পের অধীনে সবমিলে পয়োপাইপলাইন বসানো হবে ২০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৮০ কিলোমিটার অগভীর পাইপলাইন। এসব পাইপলাইন সর্বোচ্চ ৪ মিটার মাটির গভীরে বসানো হচ্ছে। অপর ২০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হচ্ছে সর্বনি¤œ ৬ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ১৪ মিটার মাটির গভীরে। প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে গভীরে পাইপলাইন বসানো হয়েছে দুই কিলোমিটার। তাতে বিভিন্ন সাইজের সবমিলে পাইপলাইন বসানো হয়েছে ৬০ কিলোমিটার। অপরদিকে হালিশহরে প্রকল্প এলাকায় পয়োশোধনাগার, ফিক্যাল স্লাজ ট্রিটমেন্ট (মানুষের মল পরিশোধনাগার) প্ল্যান্ট নির্মাণে প্রায় ৬২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

সূত্র জানায়, আগামী ২০২৬ সালের জুনে প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াসার। কিন্তু প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব সম্বলিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একনেক সভায় তোলা হয়। একনেক সভায় সংশোধিত প্রস্তাবের ডলারের বিনিময় হার হালনাগাদ করে দিতে বলা হয়। পরবর্তীতে ডলারের বিনিময় হার হালনাগাদ করে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে এটি পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

ওয়াসা সূত্র জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার সংস্থা তায়ং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এ প্রকল্পের কাজ করছে। একইসাথে চলছে গ্রাহক পর্যায়ে পয়োসংযোগ লাইন প্রদানের কাজও। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর নগরীর ২০ লাখ মানুষ স্যুয়ারেজের আওতায় আসবে। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসার এটিই হচ্ছে প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্প।

 

ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অগ্রগতি বজায় রাখার জন্য চলতি অর্থ বছরে চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। একইসাথে প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত ডিপিপি প্রস্তাব সহসা অনুমোদন দরকার। তাতে প্রকল্পের কাজের গতি ঠিক রাখা যাবে।’

 

মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৫৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে কিছু জায়গায় পাইপলাইন বসাতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে ৬ থেকে ১৪ মিটার গভীরে পয়োপাইপলাইন বসানোর ক্ষেত্রে নিম্নাঞ্চলে মাটির অবস্থা ভালো না। তাতে প্রকৌশলীদের অনেক কারিগরি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তারা বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।’

 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজের গতি নির্ধারিত সময়ে ৭৮ শতাংশ হতো। কিন্তু এটা নিয়ে এখন সংশয় রয়েছে।’

ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘স্যুয়ারেজ প্রকল্প ওয়াসার অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত ডিপিপি প্রস্তাব দ্রুত পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন পেলে কাজের গতি আরও বাড়ানো যাবে।’

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট