বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে দুঃস্থ ও নিম্নআয়ের মানুষের জীবন বিপন্ন। আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে অনেকের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিছুটা ধার দেনা করে দোকান থেকে পণ্য না পেলে অভুক্ত থাকতে হয় তাদের অনেকের। এমন অবস্থায় প্রধান উৎসবগুলোতে এসব বঞ্চিত মানুষের অংশগ্রহণ একপ্রকার বিলাসিতা ও অসম্ভব ব্যাপার। পাহাড়ের মানুষের অবস্থা আরো করুন।
এই বাস্তবতায় আসন্ন প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় খাগড়াছড়ির অরুনিমা কমিউনিটি সেন্টারে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘১ টাকায় প্রবারণার বাজার’নামে একটি প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রোগ্রামের স্লোগান ছিল ‘সবাই মিলে উৎসব সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশ’।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান।
দিনব্যাপী প্রোগ্রামে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে নিম্নআয়ের সহস্রাধিক শিশু,মহিলা ও বৃদ্ধ মানুষ অংশগ্রহণ করেন এবং এক টাকার বিনিময়ে নতুন কাপড় কিনেছেন ও পরিবারের জন্য বাজার করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, চাল,ডাল, চিনি,নারকেল, সুজি, ডিম,তেলসহ প্রায় ১৮ রকমের পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছিল একটা সুপারশপ। প্রতিটি আইটেমের দাম মাত্র ১ টাকা! এই সুপারশপে প্রতি পরিবারের দুই জনের জন্য এক টাকা দিয়ে নতুন কাপড় কেনার ব্যবস্থা যেমন ছিল তেমনি ১ টাকা দিয়ে আরো ৫টি যেকোনো আইটেম বাছাই করে কিনে নেয়ার ব্যবস্থা ছিল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ১ টাকার বিনিময়ে যে বাজার দিচ্ছে তা খুবই সাধুবাদযোগ্য। এখানে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর দুঃস্থ মানুষেরাও অংশ নিচ্ছে, যেটা সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে।
বিদ্যানন্দের বোর্ড ডিরেক্টর জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রতিটি উৎসবে ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দূর করে চাই সম্প্রীতির বন্ধন গড়তে। সে সাথে নিশ্চিত করতে চাই উৎসবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অংশগ্রহণ।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন থেকে আরও বলা হয়, আমরা এখানে বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে এসেছি। এসেছি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তৈরিতে সম্প্রীতির মেলবন্ধন স্থাপন করতে। সম্প্রীতির ভাঙা সেতুকে ভালোবাসা দিয়ে মেরামত করতে।
উৎসবে অংশ নেয়া উমেখিং মারমা বলেন, ‘আমরা ভাবতেও পারিনি প্রবারণার আগে আমাদের দরিদ্র সমাজের জন্য কেউ এত আনন্দ আয়োজন করবে! আজ আমরা খুব খুশি বিদ্যানন্দ এই আয়োজন করেছে। তারা নতুন কাপড় দিয়েছে। এক টাকা দিয়ে সংসারের প্রবারণার বাজার করতে পেরেছি।’
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মারমা ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক মেরাসাথোয়াই মারমা, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন, সহ-সভাপতি জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।
দেশ বিদেশে ভিন্নতর ও অভিনব সব আইডিয়া নিয়ে সেবামূলক কাজ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিদ্যানন্দ। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে কেউ যখন ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেনা তখন জীবনবাজি রেখে করোনা মহামারী মোকাবেলায় সম্মুখসমরে যুদ্ধ করে সাধারণ মানুষের ভালবাসা অর্জন করে নেয় এই প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবায় তাদের অসামান্য সব অবদানের জন্য ২০২৩ সালে সরকার তাদের একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও ২০২২ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয় মানবকল্যাণ পদক ও ২০২১ সালে বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক ‘কমনওয়েলথ পয়েন্টস অফ লাইট’ পদকে ভূষিত হয় এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
পূর্বকোণ/পিআর/পারভেজ