চট্টগ্রাম রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশ্বে প্রতি ৪ জনে ১ জন থ্রম্বোসিসে মারা যায়

বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবস আজ

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী

১৩ অক্টোবর, ২০২৪ | ২:৩৩ অপরাহ্ণ

‘থ্রম্বোসিস’ অর্থাৎ রক্তের জমাট প্রক্রিয়া। এটি স্বাভাবিক শারীরিক ব্যবস্থা যা ক্লট্ নামেই সবাই জানে। এটি রক্ত উপাদান প্লাটেলেট ও রক্তের জলীয় অংশে অবস্থিত প্লাজমার ক্লটিং ফ্যাক্টর এর সমন্বয়ে সংগঠিত হয়। অনিয়ন্ত্রিত ক্লট তথা থ্রম্বোসিস এর সমতা রক্ষায় ও প্লাজমায় অবস্থিত ক্লট নিয়ন্ত্রণকারী অন্যান্য প্রোটিন যেমন প্রোটিন ‘সি’, প্রোটিন ‘এস’ প্লাজমিন ইত্যাদি অংশগ্রহণ করে। আঘাত, কাটা ছেঁড়া অথবা সার্জারি পরবর্তী এটি না হলে অবিরত রক্ত ঝরতে থাকে এবং একপর্যায়ে রক্তক্ষরণজনিত জটিলতায় যে কেউই মৃত্যু বরণ করতে পারে।

 

অপরদিকে এই ক্লট জনিত জমাট প্রক্রিয়া যদি অনিয়ন্ত্রিত হয় তবে শরীরের বিভিন্ন রক্তনালীর রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এই অস্বাভাবিক রক্তের ক্লট কে থ্রোম্বাস এবং এই প্রক্রিয়ার নাম ‘থ্রম্বোসিস’। এই থ্রম্বোসিস শরীরের বিভিন্ন জরুরি অঙ্গে সংগঠিত হতে পারে। আবার এটি সংগঠিত স্থান হতে ছুটে গিয়ে দূরবর্তী কোন অঙ্গে অবস্থান নিয়ে অত্যাধিক মৃত্যু ঝুঁকিপূর্র্ণ অবস্থা এম্বোলিজম সৃষ্টি করে, যেটি অত্যন্ত মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। রোগ নির্ণয় হতে হতে মৃত্যু ঘটতে পারে। তাছাড়া হৃদযন্ত্রের রক্তনালী করোনারি আর্টারিতে থ্রম্বোসিস হলে হার্ট এটার্ক, ব্রেইনের রক্তনালীতে হলে ব্রেইন স্ট্রোর্ক এবং পা বা অন্য কোন স্থানের শিরায় হলে এটি কে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (ডিভিটি) বলে।

 

বিশ্বে হার্ট এটার্ক, স্ট্রোক, ভেনাস থ্রম্বো এম্বোলিজম ৩টি হৃদরোগের মৃত্যুর প্রধান কারণ থ্রম্বোসিস এবং এটি একমাত্র নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। বিশ্বে প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন থ্রম্বোসিস আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। হাসপাতাল ভর্তির ৬০ ভাগ রোগী ভর্তি অবস্থায় বা ভর্তির ৯০ দিনের মধ্যে থ্রম্বোসিস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে- আমাদের দেশে এই থ্রম্বোসিস জনিত মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ যেমন হৃদরোগ, ব্রেইন স্ট্রোক, ভেনাস থ্রম্বোএম্বলিজম ইত্যাদি রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল যা সাধারণ জনগণের নাগালের বাইরে। কিন্তু সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো এই থ্রম্বোসিস অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ যোগ্য। প্রয়োজন সচেতনতা। সেই লক্ষ্যে ২০১৪ সাল হতে থ্রম্বোসিস এর ধারণার সূত্রপাতকারী জার্মান চিকিৎসক, গবেষক রুড্ লফ ভার্সোর জন্ম তিথিতে প্রতিবছর বিশ্ববাসীর মধ্যে প্রতিরোধ জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ১৩ই অক্টোবর ‘বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবস’ পালিত হয়।

 

সচেতনতা : থ্রম্বোসিস ঝুঁকি ও প্রতিরোধের মুলমন্ত্র হলো- আপনি আপনার রক্তপ্রবাহ সচল রাখুন, আপনার জীবন যাত্রা সচল থাকবে। রক্ত প্রবাহ সর্বদা সচল রাখতে প্রয়োজন ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাগুলো হলো- অস্বাভাবিক বিএমআই/ ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস, ডিস্ লাইপেডিমিয়া, ধূমপান, অতিমাত্রায় আলকোহল গ্রহণ, জন্মনিরোধক বড়ি সেবন, প্রসব পরবর্তী ৬ সপ্তাহ, বড় ধরনের শল্য চিকিৎসা, ক্যান্সার, দীর্ঘমেয়াদে হাসপাতালে ভর্তি, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, জন্মগত রক্তজমাট ত্রুটি। উপরোক্ত ঝুঁকিপূর্ণাবস্থার ৫০ ভাগেরও অধিক আমরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। বাংলাদেশের মত নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে তাই ব্যয়বহুল উচ্চ মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ থ্রম্বোসিসের জন্য প্রয়োজন প্রতিরোধ সচেতনতা। আসুন থ্রম্বোসিসের বিরুদ্ধে সবাই আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলি।

 

বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবস আজ : আজ ১৩ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘মুভ এগেইনস্ট থ্রম্বোসিস’। থ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট বাঁধাজনিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। চট্টগ্রামেও পালিত হবে থ্রম্বোসিস দিবস। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় আগামীকাল সোমবার দিবসটি উপলক্ষে কর্মসূচির আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগ। রোগটি নিয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধিতে নানান কর্মসূচিও হাতে নেয়া হয়েছে। নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি পার্কে থ্রম্বোসিস ডে রান ও হাসপাতালের বিভাগীয় ক্লাস রুমে একটি বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

 

লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, হেমাটোলজি (রক্ত ও রক্ত রোগ বিভাগ) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট