চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চবিতে ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য নেই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সেন্টার

আহমেদ জুনাইদ, চবি

১০ অক্টোবর, ২০২৪ | ১:১৪ অপরাহ্ণ

গত ১২ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সতেরো জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহননের চেষ্টা করেছেন প্রায় শতাধিক। এতোকিছুর পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বিশেষজ্ঞ কিংবা কাউন্সিলিং সেবা সেন্টার নেই।

 

সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ন্যূনতম একজন মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ নিযুক্ত থাকার কথা। তাছাড়া বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ২০১৮ অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে শিক্ষাঙ্গন কেন্দ্রিক একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র না থাকলে সংশ্লিষ্ট যে কোন ভুক্তভোগীর আইনি সহযোগিতা নেওয়ার সুযোগ আছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে চবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় কাউন্সেলিং সেবা চালু করা হয়। মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা কাউন্সিলিং সেবাটি দিতেন। ওই সময় সেবা নিয়ে অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। তবে করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় এটি। ২০২৩ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে পুনরায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে নানা জটিলতায় এই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি।

 

এদিকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়ে স¤প্রতি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) বরাবর আবেদন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরাফাতুল ইসলাম। আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের ক্যাম্পাসে উপযুক্ত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র না থাকায়, শিক্ষার্থীদের একটা অংশ তাদের হতাশা ও মানসিক বিপর্যয় হতে সাময়িক মুক্তি পেতে মাদক সেবনের মত ভয়াবহ পথে ধাবিত হচ্ছে। গুণগত মানের শিক্ষার জন্য এবং মানসিক স্বাস্থ্যবান্ধব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেতে অনতিবিলম্বে ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক একটি ‘এক্সপ্রেসিভ সাইকোথেরাপি সেন্টার’ স্থাপন করা অতীব জরুরি, যৌক্তিক ও সময়োপযোগী।

 

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘ওয়ান টু ওয়ান এপ্রোচে’ প্রচলিত মানসিক স্বাস্থ্য সেবার চেয়ে ‘এক্সপ্রেসিভ সাইকোথেরাপি’র মাধ্যমে ‘গ্রুপ সাইকোথেরাপি’ বা দলগত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা অনেক স্বল্প সময়ে অধিক সংখ্যক অংশীজনকে সেবা প্রদান, কার্যকর ও সর্বাধুনিক মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা শৈলী হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, করোনার আগে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহায়তায় মানসিক কাউন্সেলিং সেবা চালু ছিলো। অনেক শিক্ষার্থী এতে উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু করোনার পরে বিভিন্ন কারণে এটি শুরু করা যায় নি। আমার পরিকল্পনা রয়েছে এটি নিয়ে, উপ-উপাচার্যের সাথে মিটিং হলে জানাবো।

 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন (প্রশাসনিক) বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি। যে শিক্ষক আবেদন করেছেন তাকে বলেছি সম্পূর্ণ প্রপোজাল নিয়ে আসতে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কাউন্সেলিং সেবা আগে চালু ছিলো তা পুনরায় চালু করা যায় কিনা তাও পর্যালোচনা চলছে।

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট