চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪

চট্টগ্রামের মৎস্যখাত : বন্যায় ক্ষতি ৫২৯ কোটি বরাদ্দ মাত্র ৪৯ লাখ

মোহাম্মদ আলী

৯ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

গত আগস্টের বন্যায় চট্টগ্রামে মৎস্যে ক্ষতি হয়েছে ৫২৯ কোটি টাকা। কিন্তু সরকার থেকে এখনো কাক্সিক্ষত ক্ষতিপূরণ পায়নি মৎস্য চাষিরা। ইতোমধ্যে সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই দফায় মাত্র ৪৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বরাদ্দের এ টাকার মধ্যে থেকে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস ৭১ হাজার কার্প (রুই, কাতলা ও মৃগেল) জাতীয় মাছের পোনা বিতরণ করেছে। চলতি মাসের মধ্যে অবশিষ্ট পোনা বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস।

 

গত আগস্টে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি এবং পার্শবর্তী দেশ ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মিরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুণ্ডসহ চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় বন্যার পানিতে ভেসে গেছে মৎস্য চাষের ঘের, হ্যাচারি, পুকুর ও দিঘি। এর মধ্যে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিরসরাই উপজেলায়। এ উপজেলার ৬ হাজার একর আয়তনের মুহূরী মৎস্য প্রজেক্টের সবগুলো মাছ পানিতে ভেসে গেছে। স্থানীয় চাষিরা জানান, তাদের প্রতি একরে গড়ে ১০ লাখ টাকার মাছ থাকে। সে হিসেবে তাদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার মাছ। এতে মিরসরাইসহ মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হন চট্টগ্রামের মৎস্য চাষিরা।

 

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিরসরাই মুহূরী মৎস্য প্রজেক্টের চাষিরা। এ প্রজেক্টের ৬ হাজার একরে চাষকৃত মাছ বন্যার পানির সাথে একাকার হয়ে গেছে। তাছাড়া প্রাকৃতিক মৎস্য ক্ষেত্র হালদার নদীর বড় আকারের রুই জাতীয় মাছ বিভিন্ন জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় মৎস্য খাতে ক্ষতির একটি তালিকা তৈরি করেছে। তালিকা অনুযায়ী চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মিরসরাই উপজেলায়। এ উপজেলায় মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৪৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা। এরপর চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা হচ্ছে ফটিকছড়ি। এ উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে ৫১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

 

চট্টগ্রামের অন্যান্য উপজেলার মধ্যে আনোয়ারায় সন্দীপে ৩২ লাখ, সীতাকুণ্ডে ৭ কোটি ৪৬ লাখ, কর্ণফুলীতে ৩৩ লাখ, পটিয়ায় ৫ কোটি ৫৩ লাখ, হাটহাজারীতে ৭৬ লাখ, রাঙ্গুনিয়ায় ৬ কোটি ৭ লাখ, বোয়ালখালীতে ২৯ লাখ, রাউজানে ১ কোটি ৮৭ লাখ, বাঁশখালীতে ১ কোটি ৩৬ লাখ, চন্দনাইশে ৮৮ লাখ, লোহাগাড়ায় ৪১ লাখ এবং সাতকানিয়ায় ৬২ লাখ টাকা।

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘গত আগস্টে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় মৎস্যখাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ভেসে গেছে মৎস্য চাষের পুকুর, দিঘি, মৎস্য হ্যাচারির মাছ। এতে মৎস্য বিভাগের হিসেব অনুযায়ী ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫২৯ কোটি টাকা। তাছাড়া বৃষ্টির পানিতে হালদা নদী বেশি প্লাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় নদীর অন্যান্য মাছ ছাড়াও রুই জাতীয় মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) খাল-বিলে ছড়িয়ে পড়ে। এমন কি এসব মাছ খাল-বিল হয়ে বিভিন্ন উপজেলাও ছড়িয়ে পড়েছে।’

 

শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘ইতোমধ্যে সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই দফায় ৪৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বরাদ্দের এ টাকার মধ্যে থেকে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস থেকে ৭১ হাজার কার্প জাতীয় মাছের পোনা বিতরণ করা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে বিতরণ করা হবে অবশিষ্ট পোনা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের জন্য সরকারি আরো বরাদ্দ পাওয়া গেলে তাও বিতরণ করা হবে।’

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট