চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের উচ্চমান সহকারী হিসেবে চাকরি করছেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবু বকর তোহা। তবে নিয়মবহির্ভূতভাবে চাকরি পেয়েছেন দাবি করে সে চাকরি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারই আপন বড়ভাই ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ ইয়াসিন। ইয়াসিন বর্তমানে চবি শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এ নিয়ে রবিবার (৬ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের মাধ্যমে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত আবেদনপত্র দিয়েছেন ওই ছাত্রদল নেতা।
আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, কিছুদিন পূর্বে আমার আপন ভাই আবু বকর তোহাকে (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত) সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানান অভিযোগ তুলে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়। প্রক্টর অফিস থেকে তাৎক্ষণিক কোন অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে আমার বাবার জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অসংখ্য শহীদ, হাজার হাজার আহত ছাত্র-জনতার ত্যাগ আমার বিবেককে বারংবার প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই ছাত্র-জনতার ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বৈরাচারমুক্ত এবং বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রাপ্ত চাকরি কেউ নির্বিঘ্নে করে যাবে সেটা মেনে নেওয়া আমার জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য আমি নিজেও এই ক্যাম্পাসে স্বৈরাচারের অন্যতম হাতিয়ার সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ কর্তৃক পাঁচবার নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছি।
আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের উচ্চমান সহকারী পদে কর্মরত আবু বকর তোহা আমার আপন ভাই সেটা যেমন সত্য, তেমনি সে চবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সেটাও সত্য। সুতরাং আমার আপন ভাই হলেও আমি আবু বকর তোহাসহ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছে তাদের যোগ্যতা এবং তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আনীত অভিযোগ খতিয়ে দেখে তাদের চাকরিচ্যুত করার জোর আবেদন করছি।
আমার ভাই পরিচয়ে আবু বকর তোহা কোন অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে কিংবা ইতিপূর্বে অন্য কোন অপরাধ করে থাকলে সেটা থেকে পার পেয়ে যাবে সেটা কখনো হতে পারে না। আপন ভাই হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখা যেমন আমার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক তেমনি স্বৈরাচারের সুবিধা নিয়ে প্রাপ্ত চাকরি নির্দ্বিধায় করে যাবে সেটা আরো বেশি অপমানজনক এবং পীড়াদায়ক বলে মনে করি।
তাই মহোদয়ের নিকট বিনীত অনুরোধ আমার ভাই ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত আবু বকর তোহার যদি কোন রাজনৈতিক অপরাধ থেকে থাকে তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হোক এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাপ্ত চাকরি থেকে তাকেসহ একই দোষে দোষী সকলকে অব্যাহতি দেয়া হউক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ ইয়াসিন পূর্বকোণকে বলেন- দেশ, আদর্শ ও মনুষ্যত্বের কাছে রক্তের সম্পর্ক যে তুচ্ছ। আপন ভাই হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখা যেমন আমার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক তেমনি স্বৈরাচারের সুবিধা নিয়ে প্রাপ্ত চাকরি নির্দ্বিধায় করে যাবে সেটা আরো বেশি অপমানজনক এবং পীড়াদায়ক।
তিনি আরো বলেন, শুধু আমার ভাই নয়। বিগত স্বৈরাচারের আমলে অন্যায় সুবিধা নিয়ে যারাই চাকরি করছে তাদের প্রত্যেকের চাকরি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভির মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, এরকম একটি আবেদন আমি পেয়েছি। তবে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে এখনো তা রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠাতে পারিনি। আমি পরবর্তীতে এটি রেজিস্ট্রার বরাবর ফরোয়ার্ড করব।
পূর্বকোণ/জুনায়েদ/জেইউ/পারভেজ