লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শনিবার রাত থেকে চলছে বোমা হামলা। বিস্ফোরণে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা গেছে আকাশে। জীবন বাঁচাতে সেখানকার মানুষজন পালাচ্ছেন অন্যত্র।
এএফপি বলছে, কোথাও কোথাও ইসরায়েলি বাহিনী মারাত্মক হামলা চালিয়েছেন। একটি জায়গায় টানা দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। যুদ্ধবিমান থেকে বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলিগুলোতে চারটি নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৈরুতের দক্ষিণে একটি এলাকা থেকে আগুনের বিশাল শিখা থেকে ধোঁয়া ঘণ্টাখানেক ধরে উঠতে দেখা গেছে।
বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলির কাছের এলাকা সাবরাতে সড়কে বহু মানুষকে দেখা গেছে। তাঁরা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ মোটরসাইকেলে, কেউবা পায়ে হেঁটেই পালাচ্ছেন। হামলার কারণে বৈরুতে লেবাননের একমাত্র বিমানবন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেছে। এর আগে শনিবার রাতে হামলা শুরুর আগে ইসরায়েলি বাহিনী বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলি থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছিল।
এক বছর আগে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ও লেবাননের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে সীমান্তে সংঘাত চলছিল। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে তীব্র বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামলায় লেবাননে ১ হাজার ১১০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং ১০ লাখের বেশি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
শনিবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে স্থলাভিযানে তারা ৪৪০ হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। ধ্বংস করেছে হিজবুল্লাহর নিয়ন্ত্রণে প্রায় দুই হাজার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থল। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন।
লেবাননে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। দেশটিতে স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি হিসেবে সীমান্তে সামরিক উপস্থিতিও বাড়াচ্ছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, লেবাননে স্থল অভিযান হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। তবে এ বিষয়ে হয়তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি।
হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের শত্রুতা বেশ পুরোনো। ২০০৬ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছিল তারা। এরপর গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েল হামলা চালালে হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েলে হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ। পাল্টা হামলা চালাচ্ছিল ইসরায়েলও। তবে ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর হিজবুল্লাহর পেজার ও ওয়াকি–টকিতে হামলার পর থেকে লেবাননে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের উত্তরে লেবাননের সীমান্ত রয়েছে। সেখানে ইসরায়েল বাহিনীর বিপুল সেনা, ট্যাংক ও কামান মোতায়েন করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন ইসরায়েলি বাহিনীর মুখপাত্র পিটার লার্নার। তিনি বলেছিলেন, স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে বিষয়টি এখনো বিবেচনাধীন। লেবাননে হামলা বাড়ানো নিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট আলোচনা করছেন বলে জানিয়েছে তার কার্যালয়। এর আগে বুধবার স্থল হামলার প্রস্তুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন দেশটির সেনাপ্রধান হেরজি হালেভিও।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার ইসরায়েলি হামলায় ১০৫ জন নিহত হয়েছেন। দেশটিতে এ পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে দেশটিতে আহত হয়েছেন ৬ হাজারের বেশি নাগরিক। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। ঘর ছাড়া মানুষেরা যাইতুনে উপকূল এলাকায় খোলা আকাশ ও রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।
ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ পাল্টাপাল্টি হামলার জেরে লেবানন সীমান্তবর্তী ইসরায়েলের উত্তর সীমান্ত এলাকা ছেড়ে গিয়েছিল ৬০ হাজারের বেশি বাসিন্দা। তাদের নিজ বাসায় ফেরানোর চেষ্টায় রয়েছে ইসরায়েল সরকার।
পূর্বকোণ/পিআর