সরকারি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন রবিউল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে শহরে একটি ঠিকানা তৈরির জন্য নিরন্তর চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু সাধ আর সাধ্যের মধ্যে মিল না হওয়ায় এক টুকরো মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করতে পারেননি। এখন সমমনা কয়েকজন মিলে টাকা জমিয়ে বায়েজিদ এলাকায় কিনেছেন জমি। সেখানে সবাই মিলে নির্মাণ করছেন বহুতল ভবনও।
শুধু রবিউল নন- তার মতো অনেকেই এভাবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণে ঝুঁকছেন। আবাসন কোম্পানির ফ্ল্যাট কেনার চেয়ে এভাবে ফ্ল্যাট নির্মাণে খরচ কম হওয়ায় চট্টগ্রাম শহরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই পদ্ধতি। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও নগরীতে একশটির বেশি এভাবে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে ধারণা দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন- দশকের ব্যবধানে শহর এলাকায় জমির মূল্য কয়েক গুণ বেড়েছে। এরসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নির্মাণসামগ্রীর দামও। এছাড়া সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক ঋণেও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এসব কারণে মানুষের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ফ্ল্যাট তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। ফলে শহরের মধ্যে স্বপ্নের একটি ঠিকানা তৈরিতে ভিন্নপথে হাঁটছেন অনেকেই।
এর অংশ হিসেবে কয়েকজন মিলে বা সমিতি করে নগরীতে ফ্ল্যাট নির্মাণের সংখ্যা বাড়ছে। এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু ব্যক্তি মিলে জোট বেঁধে একটি সমিতি দাঁড় করান। সেখানে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমান। এরপর নিজেরা পছন্দ করে কিনে নেন এক টুকরো জায়গা। সেই জায়গায় সমান ভাগে টাকা দিয়ে গড়ে তুলেন বহুতল ভবন। পরে ভাগাভাগি করে নেন ফ্ল্যাট।
বিষয়টি আরও পরিষ্কার করেন খুলশী এলাকায় অংশীদারিত্বে ফ্ল্যাট নির্মাণকারীদের একজন আব্দুর রহিম। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, সম্প্রতি ১০ জন মিলে ৫ কাঠার একটি জমি নিই আমরা। এতে যে টাকা খরচ হয়েছে তা সবাই সমান ভাগ করে দিয়েছি। এখন ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। এতেও যে টাকা খরচ হবে তা সমান ভাবে দেব আমরা। একজন দুটি করে ফ্ল্যাট পাবো।
তিনি বলেন, আবাসন কোম্পানি থেকে একটি ফ্ল্যাট কিনতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হতো- সে টাকায় এখন দুটি ফ্ল্যাট পাচ্ছি। একটিতে নিজেরা থাকলে অন্যটি ভাড়া দিয়ে ব্যাংক লোনের কিস্তি পরিশোধ করতে পারবো। শুধু আমরা নই। এই এলাকার অনেকেই এখন এভাবে যৌথ অংশীদারিত্বে জমি কিনছেন। সেখানে সবাই মিলে বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণ করছেন।
যৌথ উদ্যোগে ফ্ল্যাট নির্মাণ আশাব্যঞ্জক বলে মনে করেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান স্থপতি আশিক ইমরান। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রামে আবাসন সংকট প্রকট। যে দামে ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে তা কেনার আর্থিক সংগতি অনেকের নেই। এই অবস্থায় যৌথ উদ্যোগে ফ্ল্যাট নির্মাণ আবাসন সংকট কমাতে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, তবে এভাবে ফ্ল্যাট নির্মাণে কিছু সমস্যাও দেখা যাচ্ছে। অনেকেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে নেয়া নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করছেন না। অনুমোদিত নকশা লঙ্ঘন করে বেশি ফ্ল্যাট নির্মাণ করছেন। এই প্রবণতা রোধ করা দরকার। এ জন্য সিডিএকে নজরদারি বাড়াতে হবে। সিডিএ ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করলে আর সমস্যা থাকবে না।
জানতে চাইলে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির কো-চেয়ারম্যান-১ মোরশেদুল হাসান পূর্বকোণকে বলেন, পরিবারের মধ্যে কয়েকজন মিলে বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণ করা যায়। কিন্তু সমিতি করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণ বন্ধ করা উচিত। কারণ এতে ফ্ল্যাট নিবন্ধন করা হয় না। সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
তিনি বলেন, রিহ্যাবের মেম্বাররা জবাবদিহিতার মধ্যে থাকেন। কিন্তু যৌথ উদ্যোগে যারা বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণ করেন- তারা আমাদের জবাবদিহিতার মধ্যে থাকেন না। তারা প্রফেশনাল না হওয়ায় কাজের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়। ফলে অনেক সময় গ্রাহকরা প্রতারিত হন। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের আবাসন ব্যবসায়। সরকারের বিষয়গুলো মনিটরিং করা উচিত।
পূর্বকোণ/পিআর