জুলাই মাসের শুরুর দিকে টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নগরীর অলিগলিসহ বিভিন্ন সড়ক। সে সময় থেকে টানা বৃষ্টি, জোয়ার ও জলাবদ্ধতার পানি জমে সড়কে ‘ক্ষত’ সৃষ্টি হয়েছে। যা এখনো সারাতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য একটি তালিকাও প্রস্তুত করে চসিক। প্রথমদিকে টানা বৃষ্টি ও পরবর্তীতে বিটুমিন সংকটে সড়কের এ ক্ষত আর সারাতে পারেনি চসিক। সেই ক্ষত এখন ‘ঘা’ হয়ে সড়কে দুর্ঘটনা ও সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। তবে বিটুমিন সংকট কেটে যাওয়ায় আজ (শনিবার) থেকে কার্পেটিং এর কাজ শুরু হয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর দুই নম্বর গেট সংলগ্ন পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সড়কের উভয় পাশে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত দেখা যায়। কিছু কিছু গর্ত ভরাটে কংক্রিট দিয়েছে চসিক। তবে এরমধ্যে অনেক গর্ত থেকে ইতোমধ্যে কংক্রিট উঠে সড়কগুলো বড় ক্ষততে পরিণত হয়েছে। ছোট-বড় গর্ত, উঁচু-নিচু সড়ক, বিটুমিন ও পাথর উঠে নগরীর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক হচ্ছে সিডিএ এভিনিউ’র মুরাদপুর থেকে শুলকবহর পর্যন্ত। এরমধ্যে শুলকবহরের এশিয়ান হাউজিং এর আগে প্রায় ১০০ মিটার সড়কে রয়েছে অর্ধশত গর্ত। সেখানে সড়কের কার্পেটিং ছাড়া গর্ত ভরাটে চসিকের দেয়া কংক্রিটগুলোর কারণে সড়কটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এছাড়া ওয়াসা, বারিক বিল্ডিং থেকে ফকির হাট, মাইলের মাথা থেকে ফ্রি-পোর্ট সংলগ্ন ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদ কলেজ রোড এলাকায় ছোট বড় অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। কথা হলে ওয়াসা থেকে শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ) রুটের মাহিদ্রা চালক মো. জুয়েল বলেন, এই রুটের ওয়াসা থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ভাঙা ও গর্ত রয়েছে। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে মুরাদপুর থেকে শুলকবহর পর্যন্ত। এ সড়ক পার হওয়ার সময় মনে হয়, এই বুঝি গাড়ি উল্টে যাবে। কয়েকবার গাড়ি নষ্ট ও একবার চাকা খুলে যায়। তবে যাত্রীরা কিছুটা আহত হলেও বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি।
জিইসি, এ.কে.খান, নিমতলা সড়কের চিত্র:
সড়কের প্রস্তের দুই-তৃতীয়াংশজুড়ে গভীর গর্ত। হা করে থাকা গর্তের চারপাশে নেই কোনো নিরাপত্তাবেস্টনি। সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে সড়কটি। ব্যস্ত সড়কের দুই পাশ থেকে আসা যানবাহনের চাপে লেগে যাচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। নগরীর পোর্ট কলোনির মসজিদ সংলগ্ন এলাকার পর থেকে নিমতলা মোড়ের চিত্র এটি।
ফ্লাইওভারের র্যাম্পের কাজ চলমান থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও সড়কে রয়েছে একাধিক গর্ত। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ফ্লাইওভারের র্যাম্প নির্মাণ কাজের জন্য এখানে নিয়মিত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিন দেখা যায়, নিমতলা মোড় থেকে পোর্ট কানেক্টিং রোড় ধরে এগোলেই রাস্তার মধ্যভাগ পুরোটাজুড়ে গর্ত। ফলে সংকীর্ণ হয়ে গেছে রাস্তার দু’পাশ। সড়কটি বেশি ব্যবহার হয় বন্দরের ট্রাক যাতায়াতের জন্য। এই রোড়ের প্রায় অর্ধকিলোমিটারজুড়ে ট্রাকের সারি। দীর্ঘ সময় ধরে লেগে আছে জ্যাম।
নগরীর এ কে খান মোড় থেকে জিইসির দিকে যেতে জাকির হোসেন সড়ক ধরে কিছু দূর এগোলেই প্রায় রাস্তার এক তৃতীয়াংশজুড়ে গর্ত। সেখানে নেই নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থাও। এছাড়াও নয়াবাজার মোড়, আনন্দীপুর, পোর্ট কানেক্টিং রোড হালিশহর কে ব্লক, ছোটপুল এলাকায় ছোট-বড় একাধিক গর্ত দেখা গেছে।
পোর্ট কলোনির মসজিদ সংলগ্ন এলাকার ব্যবসায়ী এরফান আলম জানান, ওয়াসার সোয়ারেজ প্রকল্পের কাজ চলার কারণে রাস্তার এক পাশ বন্ধ। একাধিক গর্তের কারণে নিয়মিত ছোট ছোট দুর্ঘটনাও ঘটছে। এতে সংকীর্ণ হয়ে পড়া সড়কটি দিয়ে একমুখী যানবাহন চলাচল করছে। মুখোমুখি দুটি যানবাহন এলেই লেগে যাচ্ছে যানজট। ফলে এক পাশ থেকে আসা যানবাহনগুলো দাঁড়িয়ে আরেক পাশ থেকে আসা যানবাহনগুলোকে যেতে দিতে হচ্ছে।
হাটহাজারী সড়ক, বায়েজিদ বোস্তামি সড়ক ও কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়ক সাম্প্রতিক জলাবদ্ধতায় নগরীর নতুনপাড়া থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত হাটহাজারী সড়ক, অক্সিজেন থেকে দুই নম্বর গেট হয়ে প্রবর্তক মোড় পর্যন্ত বায়েজিদ বোস্তামি সড়ক ও অক্সিজেন মোড় থেকে ওয়াজেদিয়া পর্যন্ত কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়কের বিভিন্নস্থানে পিচঢালাই উঠে ছোট-বড় বেশ কিছু গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এসব সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বায়েজিদ বোস্তামি সড়কের দুই নম্বর গেট থেকে প্রবর্তক মোড় অংশ ও কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়কের পিচঢালাই উঠে খোয়া বের হয়ে গেছে বিভিন্নস্থানে। এতে এসব সড়ক দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সময় লাগছে নগরবাসীর। চলন্ত যান অসাবধানতাবশত গর্তে পড়ে ছোটবড় নানা দুর্ঘটনাও ঘটছে হরহামেশা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যানবাহনও। নগরীর অক্সিজেন এলাকার ম্যাক্সিমা চালক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমি অক্সিজেন থেকে চকবাজার পর্যন্ত গাড়ি চালাই, গর্তের কারণে গাড়ি সবসময় দুলে, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাঝেমধ্যে সড়কেই গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।
তবে এসব সড়কের বাকি অংশে ছোট-বড় অধিকাংশ গর্ত ভরাট করা হয়েছে কংক্রিটের মিশ্রণ দিয়ে। তাতেও কমেনি ভোগান্তি, কংক্রিটের মিশ্রণ সড়কের সঙ্গে মসৃণভাবে না মেলানোয় উঁচু-নিচু খন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা যায়, জুলাই মাসের প্রথম দিকে টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় মিলে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি বর্গমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে সময় থেকে টানা বৃষ্টি, জোয়ার ও জলাবদ্ধতার পানি জমে সড়কে ‘ক্ষত’ সৃষ্টি হয়েছে। যা এখনো সারাতে পারেনি চসিক। সে সময় এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য একটি তালিকাও প্রস্তুত করে চসিক। তালিকা মতে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায় এক লাখ ২১ হাজার ৮১৪ বর্গমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়কের মাত্র ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কাজ করতে পেরেছে চসিক। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সাধারণ ছুটি, কারফিউ, বৃষ্টি এবং সর্বশেষ বিটুমিনের কারণে কার্পেটিং এর কাজ আটকে যায়।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহীন উল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টির কারণে আমরা কার্পেটিং করতে পারিনি। এরপর আবার বিটুমিনের সংকট দেখা দেয়। আমরা সড়ক ঢালাইয়ের জন্য যে মানের বিটুমিন ব্যবহার করি সেটা পাওযা যাচ্ছিল না। এ কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের বিটুমিন কার্পেটিং করতে পারিনি। তবে ইতোমধ্যে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বিটুমিন চলে এসেছে। আগামী শনিবার থেকে কার্পেটিং শুরু করতে পারবো।
ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সারাতে কতদিন লাগবে এমন প্রশ্নের উত্তরে এই প্রধান প্রকৌশলী বলেন, আমরা আশা করছি দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান সড়কগুলো বিটুমিন কার্পেটিং করতে পারবো। চার সপ্তাহের মধ্যে অলিগলিসহ কার্পেটিং এর কাজ শেষ হবে।