চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

হাটহাজারীর পশ্চিম কুয়াইশে জোড়া খুন : এক মাসে ধরা পড়েনি একজন আসামিও

নাজিম মুহাম্মদ

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

কয়েক মিনিটের ব্যবধানে নগরীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিকট ও হাটহাজারীর পশ্চিম কুয়াইশে সংগঠিত জোড়াখুনের ঘটনার প্রায় মাস পার হতে চললেও ধরা পড়েনি হত্যাকারীরা। এ ঘটনায় বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন নিহতের স্বজনরা। দুটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, তারা জোড়া খুনে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছেন। তবে মামলার বাদীর দাবি, ঘটনার পরও হত্যাকারীদের এলাকায় দেখা গেছে।

 

 

হত্যাকারীর ধরা না পড়ায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা আতংকে রয়েছেন। অস্ত্রধারীদের গুলিতে নিহতরা হলেন, হাটহাজারীর পশ্চিম কুয়াইশ গ্রামের মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে মো. আনিস ও তার বন্ধু মাসুদ কায়সার। আনিছ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ থানার উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ও মাসদু হত্যার তদন্ত কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার এসআই সৈয়দ শফিউল করিম জানান, দুটি মামলাতেই একই ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। তারা আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছেন। তবে আনিসের স্ত্রী শামীম আকতার জানান, হত্যাকারীরা এলাকা থেকে পালায়নি। ঘটনার পরও তাদেরকে লোকজন এলাকায় দেখেছে। ঘটনার প্রায় একমাস হতে চললেও খুনিরা ধরা না পড়ায় পরিবারের সদস্যরা আতংকিত। আনিস হত্যায় নগরীর বায়েজিদ থানায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলা দায়ের করেন আনিসের স্ত্রী শামিম আকতার মনি।

 

 

মাসুদ হত্যায়ও জেলার হাটহাজারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নিহত মাসুদের ভাই মো. আরিফ। দুটি মামলায় সুনির্দিষ্ট চারজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন, হাটহাজারী বুড়িশ্চর ইউনিয়নের ফৌজদার আলী শাহ বাড়ির মৃত আবদুল খালেকের ছেলে মো. আরমান বাচ্চু (৩৫), কুয়াইশ ফোরক কলোনির শামসুল আলমের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর (৪০), শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২৫) ও বায়েজিদ শহীদ নগর সোবহান কন্ট্রাকটার বাড়ির মো. আলমের ছেলে মো. হাসান (৩৫)।

 

আনিছ হত্যা মামলার এজাহারে বলা হয়, আনিছ ইট বালি ব্যবসা করেন। আরমান বাচ্চুর সাথে ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। গত ২৯ আগস্ট সকাল আনুমানিক ১০ টার সময় বন্ধু মাসুদ কায়ছারকে নিয়ে ব্যবসায়িক কাজে কুয়াইশ মোড়ে যান। দুপুরে বাসায় না ফিরলে আনিছকে ফোন দোন তার স্ত্রী। তখন স্ত্রীকে আনিছ জানায়, তিনি বন্ধু মাসুদের সাথে আছেন। রাত আটটার সময় আনিছের মায়ের মুঠোফোনে জনৈক ব্যক্তি ফোন করে জানায়, আনিছকে গুলি করা হয়েছে। তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আনিছের স্ত্রী শামিম আকতার মনি জানান, খবর পেয়ে পরিবারের লোক দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে গেলে আনিছকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।

 

এ সময় প্রতিবেশী জাবেদ জানান, এলাকার লোকজন আহত আনিছকে যখন উদ্ধার করতে বের হয় তখন আনিছের বন্ধু মাসুদের সাথে হাটহাজারী পশ্চিম কুয়াইশ ফারুকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তাদের দেখা হয়। তখন মাসুদ তাদেরকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় (২৯ আগস্ট) আনিছসহ একটি অটোরিক্সায় করে কুয়াইশ-অক্সিজেন রোডের নাহার গার্ডেনের পূর্ব দিকে পৌঁছালে তিন চারজন যুবক আনিছকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি করে। মাসুদ তখন পাশ্ববর্তী বিল দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আনিছের পেটে ১৪টি এবং পুরো শরীরে ১০০ টির অধিক গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। শামিম আকতার জানান, মাসুদ তার পরনের কাপড় পাল্টাতে বাসায় যাবার পথে হাটহাজারী পশ্চিম কুয়াইশ ফারুকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে সাবেরের দোকানের সামনে পৌঁছালে একই যুবকরা মাসুদকেও গুলি করে হত্যা করে।

 

আনিছ ও মাসুদকে বহনকারী রিকশাচালক আরিফের বরাত দিয়ে শামীম আকতার জানান, হত্যাকারীরা আগে থেকে ওই পথে বসা ছিল। তারা সংখ্যায় চারজন ছিল। আনিছকে তারা শুধু গুলি করেছে তা নয়। কিরিচ দিয়েও কুপিয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে।

 

 

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট